Apan Desh | আপন দেশ

বিলুপ্তপ্রায় রেশম পোকার রেশম শিল্প; কর্মহীন হয়েছে হারাচ্ছে

আসাদুজ্জামান আসাদ, মানিকগঞ্জ থেকে

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩

বিলুপ্তপ্রায় রেশম পোকার রেশম শিল্প; কর্মহীন হয়েছে  হারাচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

বাংলার রেশমের কাপড় ছিল পৃথিবীখ‍্যাত। ব্রিটিশ শাসনামলে নীলচাষকে চাপিয়ে দিয়ে সুকৌশলে এই শিল্পটাকে ধ্বংস করেছে ব্রিটিশরা।

রেশমের মিহি কাপড়কে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় অংশুপট। সেই প্রাচীনকাল থেকে রেশমের ব‍্যবহার চলে আসছে। ধারনা করা হয় চীনে প্রথম রেশমের সুতা আবিস্কার হয়। বাংলাদেশে রেশম কাপড়ের উৎকৃষ্টতার বিচারে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হতো: গরদ, তসর, মটকা।

এছাড়াও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় খমের সাম্রাজ‍্য আংকোরিয়ান যুগে বৌদ্ধ মন্দিরের সন‍্যাসীরা তুঁত গাছের ছাল থেকে কাগজ তৈরী করত। কাগজগুলো বই তৈরীতে ব‍্যবহৃত হতো যা ক্রাইং নামে পরিচিত ছিল।

রেশম সুতার পুরোটাই আসে রেশম পোকার মাধ‍্যমে। এই পোকার অন‍্যতম খাদ‍্য তুঁত গাছের পাতা। তুঁত গাছ রেশম পোকার খাদ‍্যই নয় নানা ঔষধিগুনে গুনান্বিত একটি গাছ।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার প্রতিটি রাস্তার দু'ধারে তুঁত গাছের সারি ছিল লক্ষ‍্যনীয়। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে তুঁত গাছের সারি। মাঝে মাঝে কিছু রাস্তায় দেখা যায় তুঁত গাছ।

১৯০৮ সালে সরকার রেশম পোকা চাষের জন‍্য একটি বিভাগ চালু করে। এটাই ছিল রেশম শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত দীর্ঘমেয়াদি একটি পদক্ষেপ।

বাংলায় তুঁত গাছের চাষের এলাকা ১৮৯৬ সালে ছিল ৫৪ হাজার হেক্টর। ১৯১৪ সালে তা দাড়ায় ৭ হাজার হেক্টরে এবং ১৯৩৭ সালে ৪ হাজার হেক্টরে। ভারত বিভাগের পর পূর্ব বাংলায় দশ শতাংশের মত তুঁত চাষের এলাকা দাড়ায় বাকি নব্বই পশ্চিম বঙ্গে। পাকিস্তান আমলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নি। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন‍্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে ১৯৬২ সালে সরকারী অর্থায়নে রাজশাহী সিল্ক ফ‍্যাক্টরী চালু হয়।

১৯৭১ সনের যুদ্ধের পর রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন‍্য অধিকতর সুসংবদ্ধ নীতি গ্রহণ করা হয়। এই শিল্পের জন‍্য তখন বৈদেশিক সাহায‍্য ও কারিগরি সহায়তা লাভ করে। ১৯৭৭ সনে সিল্ক খাতের কার্যক্রম সমন্বয়ের উদ্দ‍েশ‍্যে বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে অভিষ্ট লক্ষ‍্য অর্জনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে উন্নয়ন ধীরগতিতে চলে। পরবর্তীতে আশির দশকে গ্রামীন কর্মসংস্থান এবং আয়ের অন‍্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে এ শিল্পের গুরূত্ব বৃদ্ধি পায় বেসরকারী উদ্যোগে ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় রেশম শিল্পের পুনরুত্থান ধারনা করা হয়।

তুঁত চাষ এলাকার পরিমান তিন হাজার হেক্টরের উপরে দাঁড়ায় পঞ্চাশ হাজারের উপর লোকের কর্মসংস্থান হয়।

মানিকগঞ্জে প্রশিকা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেডস নামক এনজিও প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রেশম পোকা ও তুঁত চাষের ক্ষেত্র নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারী ও বেসরকারি ব‍্যক্তি উদ্যোগে তুঁত চাষ সম্প্রসারিত হতে থাকে। উপজেলার আনাচে কানাচে রাস্তার দু’পাশে তুঁতের সারি শোভা বর্ধন করতে থাকে। কালের বিবর্তনে রেশম শিল্পের সাথে তুঁত গাছগুলি বিলুপ্তির পথে।

তুঁতের লালচে কালো ফল খুবই রসালো, নরম, মিষ্টি টক ও সুস্বাদু। কৌষ্ঠকাঠিন‍্য দূর করার জন‍্য পাকা ফল উপকারী। এছাড়াও পাকা ফলের টক মিষ্টি রস বায়ু ও পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক। তুঁত গাছের ছাল ও শিকড়ের রশ কৃমিনাশক।

মানিকগঞ্জে রেশম পোকাকে খাওয়ানোর জন‍্যই তুঁত রোপন করা হয়েছিল আশির দশকে। আজকের প্রজন্ম জানেই না এটা তুঁত গাছ এর থেকে নানা প্রক্রিয়ার মাধ‍্যমে রেশমী সূতা তৈরী করা হয়।

(রুচিশীল পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আপন দেশ ডটকম-এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়। )

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়