Apan Desh | আপন দেশ

চাঁইয়ের কদর বেড়েছে, তবু অবহেলিত কারিগররা

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

চাঁইয়ের কদর বেড়েছে, তবু অবহেলিত কারিগররা

ছবি: আপন দেশ ডটকম

বাঁশের তৈরি মাছ ধরার জনপ্রিয় ফাঁদ খলশানি বা চাঁই। নওগাঁর রাণীনগর, আত্রাইসহ বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে মাছ ধরার প্রাচীন উপকরণটি। তবে নানা কারণে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলো ভালো নেই। বছরের কয়েকটি মাস কারিগররা খলশানি তৈরি করেন। তারপর ওই আয় দিয়ে সারাবছর সংসার চালান।

কারিগররা জানান, খলশানি তৈরির সব উপকরণের দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিটি খলশানি প্রকার ও মানভেদে দুইশ ৫০ থেকে তিনশ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাণীনগরের ঐতিহ্যবাহী ত্রিমোহনী ও আবাদপুকুর হাটসহ বিভিন্ন বাজারে খলশানি পট্টিতে বেচা-কেনার জন্য জনসাধারণের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

কারিগররা জানান, চাঁই তৈরিতে প্রধান কাঁচামাল বাঁশ ও তালের ডাকুর। প্রথমে বাঁশ বাজার থেকে কিনে আনা হয়। এরপর বাঁশ চিরে খিল তোলা হয়। সেগুলো শুকিয়ে নেয়া হয় হালকা রোদে। এরপর তালের ডাকুর থিতিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়। তালের ডাগুরের আঁশ দিয়ে খিল বান দেওয়া হয়। তারপর সুতো দিয়ে বেঁধে তৈরি হয় চাঁই।

২৫ বছর ধরে খলশানির বানানোর কাজে জড়িত কালিপদ। তিনি জানান, একটি বাঁশ আকারভেদে একশ ৫০ থেকে দুইশ ৫০ টাকায় কিনে আনা হয়। আকারভেদে একটি বাঁশ থেকে পাঁচ থেকে ১০টি খলশানি তৈরি হয়। এ ছাড়া তালের ঢিঙ্গা ২০ টাকা (একটি) কিনতে হয়। বাঁধার জন্য কট সুতো লাগে। তিনি বলেন, সারাদিনে একজন একটি খলশানি তৈরি করতে পারে।

এসব খলশানি মানের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অঞ্চলভেদে বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে মাছ শিকারিরা এ জেলা থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে নিয়ে যান।

ত্রিমোহনী হাটে খলশানি কিনতে আসা ক্রেতা খলিলুর রহমান বলেন, শখের বসে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরতেই এই খলশানি কিনতে হাটে এসেছি। প্রতি বছরই এই খলশানি কিনি। তবে বর্ষা মৌসুমে মাঠে এই খলশানি পেতে মাছ ধরার মজাই আলাদা।
ঋষিপাড়ার কারিগর ও বিক্রেতা হরিবল এবং মাধব জানান, বর্ষা এলেই খলশানির কদর বাড়ে। হাটবাজারে বিক্রিও ভালো। তবে এখন সারাবছরই টুকটাক খলশানি বিক্রি হয়।

তারা আরো জানান, বর্তমানে ছোট জাতের মাছ ধরার সুতি, ভাদায় ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশি প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি খলশানি সামগ্রী এমনিতেই টিকে থাকতে পারছে না। কিন্তু জীবনের তাগিদে পৈতৃক এই পেশা ধরে রেখেছেন তারা।

নিজামপুর গ্রামের কারিগর চন্দন সাহা বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই গোত্রের মানুষ। আমাদের পুঁজি বলতে কিছুই নেই। যদি সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হতো তাহলে আমরা এই খলশানি পেশায় প্রয়োগ করে এই ব্যবসাকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করতাম।
খলশানি তৈরির কারিগর নিরঞ্জন বলেন, প্রথমে বাঁশ নিয়ে এস মাপ দিয়ে কাটতে হয়। তারপর বাঁশ থেকে খিল তুলতে হয়। রোদে শুকাতে ও রঙ করতে হয়। এরপর গাটতে হবে। গাটার পরে টানা দিয়ে বেঁধে চাটা তৈরি করতে হয়। চাটা তৈরির পর চাকাতে হবে ও সুতো দিয়ে শক্ত করে বাঁধার পর একটি খলশানি তৈরির কাজ শেষ হয়। পরে নওগাঁসহ বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আবার অনেকে বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, খলশানি একটি প্রাচীন মাছ ধরার উপকরণ। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই খলশানির চাহিদা এখন অনেকটাই কমে গেছে। এই উপজেলায় এই পেশার সঙ্গে যে পরিবারগুলো এখনো যুক্ত আছে আমি তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করবো।

আপন দেশ ডটকম/আরইউ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়