Apan Desh | আপন দেশ

মা-বাবার মরদেহ রেখে কেন্দ্রে গেল দুই পরীক্ষার্থী

নেত্রকোনা ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:০৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ০১:১০, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

মা-বাবার মরদেহ রেখে কেন্দ্রে গেল দুই পরীক্ষার্থী

সংগৃহীত ছবি

চারদিকে স্বজনদের কান্না-আহাজারি! বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে এলেন নাজমা বেগম। আর হাসপাতালে মায়ের মরদেহ রেখে পরীক্ষায় অংশ নিলেন সুমাইয়া আক্তার। বাবা-মা হারা এই দুই পরীক্ষার্থীর কলমের কালির চেয়ে যেন চোখের পানিতেই ভিঁজেছে বেশি। 

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে হৃদয়বিধারক দুটি ঘটনার একটি নেত্রকোনার, আরেকটি খাগড়াছড়ির। পরীক্ষার্থী দু’জনের বাড়ীর দূরত্ব শতকিলো দূরে কিন্তু ঘটনার আবহ অভিন্ন। তাদের বুকফাঁটা কান্না আর চোখের নোনাজল দৃষ্টি কেড়েছে, হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণের।    

নাজমা বেগম। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  আর সুমাইয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা। 

নাজমার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে আকস্মিক স্টোকজনিত কারণে নাজমার বাবা নুরুল হক মীর (৫৬) মারা যান। পরিবারের কর্তার হঠাৎ এই চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্বজনরা। 

এমন অবস্থায় নাজমা বেগম তার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র গুজিরকোণা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শনিবার যায় পরীক্ষা দিতে। সেখানে পরীক্ষা চলাকালে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নাজড়িত কন্ঠে নাজমা বলে- বাবা আর নেই! বাবা আর কখনই আমাকে মা বলে ডাকবে না! এটা আমি মানতে পারছি না! বাবার স্বপ্ন ছিল আমি অনেক বড় হব। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি; কিন্তু বাবার এভাবে চলে যাওয়া আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।

এই শিক্ষার্থী যখন অশ্রুসজল চোখে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকছিল তখন তার বন্ধুদের চোখেও জল। সেটি ছুঁয়ে গেছে শিক্ষকদেরও।

নাজমা বেগমের শিক্ষকরা জানান, ছোটবেলা থেকেই সে অনেক মেধাবী ছাত্রী। নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোক কুমার ভাদুড়ি বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের এই মেয়েটি পড়াশোনায় ভীষণ মনযোগী। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে মনে কষ্ট চেপে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমি তার প্রতি সমবেদনা জানাই। নাজমা জীবনে অনেক বড় হোক এই কামনা করি।

এদিকে সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সুমাইয়ার মা। সদরের সাঁওতাল পাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার বাসিন্দা তারা। 

মায়ের মৃত্যুর পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে পরীক্ষার্থী। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে। থানার ওসি সুমাইয়া আক্তার নামের ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সর্বাত্বক সহায়তা করেন।
সুমাইয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে সে জানতে পারে মা বেঁচে নেই। খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সুমাইয়া। দ্রুত তাকে পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনচারুল করিম। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় মানসিক সাহায্য ও উৎসাহ দিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে সুমাইকে নিয়ে যান তিনি।

সুমাইয়া পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার কেন্দ্র পানছড়ি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।

পানছড়ি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলি চাকমা বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক তার খেয়াল রেখেছি। তবে পরীক্ষা দিতে এসে তার কোনো অসুবিধা চোখে পড়েনি। আমি মাতৃস্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছি।

ওসি আনচারুল করিম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মায়ের মৃত্যুতে জ্ঞান হারানো মেয়েটিকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় আমি নিজেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে আসি। এটি আমি দায়িত্ব মনে করেই করেছি। তাকে সাহস জুগিয়েছি এবং দুজন পুলিশ সদস্যকে সার্বক্ষণিক তার পাশে থাকার ব্যবস্থা করেছি।

 

আপন দেশ ডটকম/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ