Apan Desh | আপন দেশ

গ্রাম্য সালিশে ২ নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের কারাদণ্ড

রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গ্রাম্য সালিশে ২ নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের কারাদণ্ড

সংগৃহীত ছবি

সালিশী বৈঠকের নামে বিবস্ত্র করে দুই নারীকে নির্যাতন। এ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের ১৪ বছর, ২ জনের ৩ বছর এবং ৪ জনের ১ বছরের করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের পর নিরাপত্বাহীনতার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী দুই নারী। ঘটনা রংপুরের বদরগঞ্জের। 

বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান এই রায় দেন।

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন জানান, উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন, তার সহযোগী মহুবুল ইসলাম, চিকনা এনামুলকে চৌদ্দবছর, মোটা এনামুলকে ৩ বছর এবং সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াস,  সেকেন্দার মন্ডল, রউফ মন্ডল মজম আলী ও বাবলুকে ১ বছরের করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। এছাড়াও ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় মামলার বাকি ৪৫ আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে স্থানীয় হাফিজা বেগম হ্যাপি ও সাহিদা বেগমের বিরুদ্ধে সালিশী বৈঠকে তাদের বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। বিষয়টি সেই সময় গণমাধ্যমে আসলে হাইকোর্ট স্বপ্রনোদিত হয়ে রুল দেয়।

পরে হ্যাপী বাদী হলে মামলা করলে ৫৪ আসামির বিরুদ্ধে দুই দফায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪২, ১৪৭, ৩২৩, ২২৫, ১১৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু স্বাক্ষ্য ও জেরা এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন। অভিযোগপত্রে ৩৫৪ ধারা না থাকলেও স্বাক্ষ্য বিশ্লেষণে ওই ধারায়ও রায় দেয়া হয়। ১৫ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যশেষে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর পর মামলাটির রায় দেয়া হলো।  

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। খালাস প্রাপ্তদের বিষয়ে নথিপত্র ঘেটে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক বলেছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তারা। 

তবে রায় পাওয়ার পর আরও নিরাপত্বাহীন হওয়ার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট দুই নারী। আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে হাফিজা বেগম হ্যাপি বলেন, রায়ে মাত্র ৯ জনের দণ্ড হয়েছে। বাকিদের খালাস দেয়া হয়েছে। তবুও আমি খুশি। তবে আমি অনিরাপদ। কারণ দণ্ডপ্রাপ্ত এবং খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি ঠিকভাবে বাড়ি যেতে পারবো কিনা জানি না। আমাকে তারা মেরেও ফেলতে পারে। সেজন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।

অন্যদিকে সাহিদা বেগম বলেন, মামলার পর আদালতের আদেশ থাকলেও শুধু হ্যাপির বাড়িতে পুলিশ পাহারা দিয়েছে। আমি সব সময় অনিরাপত্তায় আছি। আমি পুলিশের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই। তা না হলে ওরা আমার জীবন নাশ করতে পারে।
আপন দেশ ডটকম/ এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়