Apan Desh | আপন দেশ

“ স্কুলে টুপি-পাঞ্জাবী পড়ে আসলে শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ”

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

“ স্কুলে টুপি-পাঞ্জাবী পড়ে আসলে শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ”

ইনসেটে হুমকিদাতা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আকন

স্কুলে টুপি, পাঞ্জাবী পড়ে আসা যাবে না। এমন নির্দেশ দিয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আকন। এমনকি এই নির্দেশ পালন না করলে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করার হুমকিও দেন তিনি।

এমন অভিযোগ করে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্কুলের ক্লাস চলাকালীন স্কুল পরিদর্শনে এসে সপ্তম শ্রেণির কক্ষে যান সভাপতি জাহাঙ্গীর আকন ও প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম। তখন ওই ক্লাসে পাঠদান করান মজিবুর রহমান নামের একজন সহকারী শিক্ষক। পাঠদানকালে তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও টুপি। মজিবুর রহমান নামের ওই শিক্ষক তখন ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছিলেন। পাঞ্জাবি পরে ইংরেজি পড়ানোর কারণে ওই পোশাক পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। সাথে থাকা প্রধান শিক্ষককে নিয়ম না মানলে বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দেন সভাপতি।

তারপরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে এলাকাজুড়ে। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা তার একার নেই এবং সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বেতন বন্ধেরও সুযোগ নেই।

এলাকাবাসীর দাবি, এসব কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, আর যে কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জায়েদ পাভেল বলেন, আমরা ক্লাস করছি হঠাৎ স্কুলের সভাপতি ক্লাস রুমে আসেন। তখন আমি পাঞ্জাবি টুপি পরে ক্লাস করছিলাম। আমাকে দেখে বলে নামাজ ছাড়া টুপি পরা যাবে না। তখন অন্য শিক্ষক আমার জন্য রিকোয়েস্ট করলে তিনি বলেন, কোনো রিকোয়েস্টে কাজ হবে না। এখানে টুপি পরে ক্লাস করা চলবে না।

প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, আমি প্রায় অর্ধশত ছাত্র-ছাত্রীর ইংরেজি বইয়ের পাঠদান করাচ্ছিলাম। হঠাৎ তারা ক্লাসে প্রবেশ করে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করে এ রকম ধর্মীয় পোশাকে কি ইংরেজি পড়ানো যায়? পরে আমাকে বলে এই পোশাকে স্কুলে ক্লাস করানো যাবে না। তখন আমি জিজ্ঞেস করি, তাহলে কি পোশাক পরব? তখন তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিয়েন। আর প্রধান শিক্ষককে বলেন, যদি এই পোশাকে পরবর্তীতে ক্লাসে আসেন তাহলে তার বেতন বন্ধ করে দেবেন।

মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, আমি সভাপতির সাথে গিয়ে ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু পরে আমাকে ওই শিক্ষক বলেন যে সভাপতি ধর্মীয় পোশাক পরে স্কুলে না আসার জন্য। তবে আমাদের স্কুলে শিক্ষকদের জন্য কোনো পোশাক নির্ধারণ করা নেই, সবাই শালীন পোশাকে ক্লাস করাতে পারে।

অভিযুক্ত সভাপতি জাহাঙ্গীর আকন বলেন, আমি ক্লাসে টুপি না পরার কথা বলিনি তবে তাদের সুন্দর পোশাক পরে আসতে বলেছি। তার পোশাকের ব্যাপারে আমি ক্লাসে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে যে বলেছি এটা আমার ভুল হয়েছে। ক্ষমা চাচ্ছি, আমি পোশাক পরিবর্তনের কথা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য নয় স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের পরিপাটি থাকার জন্য বলেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনেছি। তবে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে তারপরে বলতে পারব। তবে যৌক্তিক সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার সুযোগ কারো নেই। আর পোশাকের ব্যাপারে এমন মন্তব্য সমুচিত নয়।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জেনেছি তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

আপন দেশ ডটকম/ এবি/ সূত্র দেশরূপান্তর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ