Apan Desh | আপন দেশ

আওয়ামী লীগ নেতাকে পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:৫১, ৩ মে ২০২৩

আপডেট: ২২:১৫, ৩ মে ২০২৩

আওয়ামী লীগ নেতাকে পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগ

ফাইল ছবি

মাদারীপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আবদুস সালামকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধর শেষে তাকে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।

মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খন্দকার আবদুস সালাম তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে জমি রেজিস্ট্রির জন্য উপজেলা সাব রেজিস্টারের কার্যালয়ে যান। সাব রেজিস্টারের কার্যালয়ের প্রবেশ করতেই তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল। পরে পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান ওরফে পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আব্দুস সালামকে বেদম মারধর করেন। একপর্যায় তার হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এসময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

পরে স্থানীয়রা আহত সালামকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ‘১৫ আগস্ট’ উপলক্ষে গত ৩১ আগস্ট খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালাম। এ সময় তিনি রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান ওরফে পল্লবীর সমালোচনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন। এরই জের ধরে ফরিদা হাসান পল্লবীর উপস্থিতিতে তার দুই ছেলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পিয়াল ও পাভেলসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আব্দুস সালামকে একা পেয়ে মারধর করেন।

মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করার পরেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায় তার ছেলেরা। মারধর করে আমাকে পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরে নেমেও ওরা আমাকে মারধর করে। আমার পরনে পায়জামা ছাড়া সব ছিঁড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের জন্য দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ছিল। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল মুঠোফোনে বলেন, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে আঙুল কেউ তুলতেই পারে। তবে আমি যখন উপজেলায় যাই তখন দেখি তিনি উপজেলার পুকুরের ভেতরে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ ভাই তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আমি শুনেছি, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) কোনো এক লোকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটছে কিনা তা আমি জানি না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, পল্লবী ও তার ছেলে পিয়াল তারা কেউ আওয়ামী লীগ বা দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে নেই। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের কর্মী। তারাই উপজেলায় হাঙ্গামা মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগে না থেকেও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। আমরা আইনিভাবে এই ঘটনার বিচার দাবি করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারী। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালামের গুরুতর কোনো আঘাত নেই। তবে তাকে চরথাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়