
জায়েদা খাতুন।
চরম প্রতিকূলতার মধ্যে ভোটের মাঠে ছিলেন গাজীপুর সিটির বেসরকারিভাবে নির্বিাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। ভোটের একদিন আগেও চিত্র ছিল ভিন্ন। ক্ষতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটাই তেজিভাব দেখা গেছে।
আর ভোটের দিন বাসায় গভীর ঘুমে থাকবেন বলে এমন মন্তব্য ছিল বিএনপিমনা ভোটারদের। কিন্তু একদিন পরই তা পাল্টে যায়। ঘরমুখো ভোটার ছিল ভোটকেন্দ্রমুখী। আর কেন্দ্র দখলের তো শঙ্কাও বাস্তবরূপ পায়নি। নির্বাচন কিশনের দাবি এবার অর্ধশতভাগ ভোট পড়েছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে।
রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিনীদের ভিসানীতির পরিবর্তন ও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের সিদ্ধান্তটির প্রভাব কিছুটা হলেও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পড়েছে। গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে চিত্র দেশবাসী লক্ষ করেছে এবার তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি।
এ দৃশ্য আগামী নির্বাচনের জন্য কিছুটা হলেও সুবাতাস দেয়- বলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম।
বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
ভোটের আগের রাতে থাকে থমথমে পরিবেশ। ভোটারদের মধ্যে ফিসফিস করে প্রশ্ন-উত্তর দুটোই মিলে। ভোটে কী হবে? কেন্দ্রে গিয়ে কী হবে? আমার ভোটটা কে দেয় কে জানে। তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দুদিন আগে এমন কথা বাতাসে ভাসলেও একদিন আগে তা বাতাসেই বিলীন হয়েছে।
ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। ধারণা করা হয়েছিল ভোট কেন্দ্রে লোকসমাগম ঘটবে না। কিন্তু বেলা যতো গড়াচ্ছিল ভোটার তত বাড়ছিল। নিরবে এসে পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে চলে গেছেন ভোটার। নির্বচানের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ, অবাধ।
নগরীর কলেজ রোডের বাসিন্দা ইমতিয়াজ ভোট দিতে লাইনে ছিলেন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ি। প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিবেদককে বলেন, ভোট দিতে আসার ইচ্ছ ছিল না। তবে গতকাল সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছি। ধারণা যা ছিল তা পাল্টে গেছে বলেই ভোট কেন্দ্রে এসেছি। মনের মধ্যে যে কষ্টা, ক্ষোভ একটা ভোট দিয়ে তার কিঞ্চিত প্রশমন করব।
এদিকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর ব্যাজ ধারণ করা ভোটার এ প্রতিবেদককে বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। আমরা সবিনয়ে স্বজন, সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছে আজমত উল্লা খানের স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পৌঁছে দিচ্ছি। ভোটার তার যোগ্য মেয়র খুঁজে নিবে।
দ্বিতীয় নারী মেয়র জায়েদা খাতুন
২০১১ সালে দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার। আইভীর পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছেন জায়েদা।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী- জায়েদা খাতুনের জন্ম ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। পিতার নাম সামছুল ইসলাম, মা আফাতুন। স্থায়ী ঠিকানা কানাইয়া, গাজীপুর সদর, গাজীপুর।
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। তার স্বামী মো. মিজানুর রহমান পাঁচ বছর আগে মার গেছেন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য নেই।হলফনামায় তার আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা।
ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে শেয়ারমূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ঘোষিত ফলাফলে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত জায়েদা খাতুনকে মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে জায়েদা খাতুনকে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। মূলত ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজকে ভিত্তি করেই তিনি রাজনীতিতে আসেন।
জাহাঙ্গীর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও। তিনি সিটি মেয়র হিসেবে পুরো মেয়াদকাল দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।