ছবি : সংগৃহীত
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে তার ভাই-ভাতিজার যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল তা আপাত-অবসান হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
শনিবার (৩ জুন) বিকালে গৌরনদী পৌরসভা চত্বরে খোকন ও তার ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ এক মঞ্চে ওঠেন। সেখানে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তারা পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
দুই ভাইয়ের এই আলিঙ্গন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করবে বলে মত প্রকাশ করেন সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্। তিনি এবারের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্বেও রয়েছেন।
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এই সভায় খোকন সেরনিয়াবাতের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে নতুন একটি পথের সূচনা হলো।’
তিনি সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনার যারা এখানে উপস্থিত আছেন তাদের সকলের নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করার অনুরোধ করছি। আশা করি আপনারা আজ থেকেই খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করতে নির্বাচনীকাজে নেমে পড়বেন।’
বরিশালের বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ (আবুল হাসানাতের ছেলে) এবারও সিটি ভোটে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় খোকনকে। এতে চাচা-ভাতিজা ও দুই পক্ষের আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দ্বন্দ্ব মেটাতে গত মাসের ৬ তারিখ একই স্থানে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়। সেই সভায় যোগ দেননি মেয়রপ্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। এতে সিটি নির্বাচন সামনে রেখে আবুল হাসানাত ও তার ছেলে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে খোকনের বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় সাদিক অনুসারী ও সাদিকবিরোধীরা। ওই ঘটনার পর ঢিলেঢালাভাবে নির্বাচনীয় প্রচার চলছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ রক্ষা এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মুখ উজ্জ্বল করতে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যদি কোনো বেইমান-গাদ্দার থেকে থাকে তাদের প্রতি সতর্ক থাকবেন। সে যদি আমি হই সেই গাদ্দার, তাহলে আমাকেও আপনারা জুতাপেটা করবেন। আর যদি কেউ গাদ্দারি না করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নৌকার পক্ষে কাজ করে তাকে অবশ্যই আমরা ফুলের মালা গলায় দিয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এগিয়ে যাব।’
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার আজকে ভিন্ন একটা অনুভূতি। খোকন ভাই গেট দিয়ে যখন আসতেছিলেন, কিছুদূর আসার পর হাসানাত ভাই এমন একটা অন্তর খোলা ডাক দিলেন, আয় খোকন আয়, আমার সত্যি বুকটা জুড়িয়ে গেছে। মনে হইল যে হাসানাত ভাই খোকনের কেবল বড় ভাই নয়, পিতৃস্নেহে সন্তানকে যেভাবে হৃদয় থেকে নিঙড়িয়ে দেয়, এই রকম একটা ডাকে কিন্তু আমাদের কাছে তা প্রমাণ হয়েছে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের নির্বাচনের চেহারাটা আজ থেকে বদল হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম রাব্বানি চিনু, আনিচুর রহমানসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতারা।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।