Apan Desh | আপন দেশ

দুশ্চিন্তায় ভাসমান খাঁচার মাছ চাষিরা

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

দুশ্চিন্তায় ভাসমান খাঁচার মাছ চাষিরা

সংগৃহীত ছবি

পানি দূষণ, খাদ্যের দাম অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে যাওয়া এবং মাছের কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলায় সংকটে আছেন চাঁদপুরের ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্পের চাষিরা।

সম্প্রতি শহরের পুরানবাজার, নতুনবাজার, রঘুনাথপুরের খাঁচায় মাছচাষিদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ২০০২ সালে ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি শুরু হয়। তবে অন্য সব পদ্ধতির তুলনায় ভাসমান পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ অনেকটা লাভজনক ও সাশ্রয়ী। তাই পদ্মা, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতেও খাঁচায় ভাসমান অবস্থায় মাছ চাষির সংখ্যা বাড়তে থাকে।

তারা জানান, মাছের খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে মেশা এবং কচুরিপানা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাঁচার মাছ মারা যেতে শুরু করে। চাষ করা মাছের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। এতে করে গত এক বছরে প্রায় শতাধিক খাঁচা বন্ধ হয়ে গেছে।
রঘুনাথপুরের মাছচাষি আলমগীর বলেন, আমি ডাকাতিয়া নদীতে চারশ খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালের পর নানা সংকটে আমার এখন একশ খাঁচা আছে। সরকার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে আমাদের খাঁচায় মাছ চাষ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

আরেক মাছ চাষি আরিফ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যের দাম বস্তায় তিনশ থেকে চারশ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় মাছের দাম বাড়েনি। খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে আমাদের এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।

খাঁচায় কাজ করা শ্রমিক বাতেন মিয়া বলেন, আমরা অর্ধশতাধিক শ্রমিক মাছের খাঁচায় কাজ করে সংসার চালাতাম। কিন্তু বর্তমানে খাঁচায় মাছ চাষে চাষিরা লাভবান না হওয়ায় অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছেন চাষাবাদ। এতে অনেক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। আমরাও বেকার হওয়ার শঙ্কায় আছি।

জেলা মৎস্য অধিদফতর তথ্য মতে, খাঁচায় মাছ চাষ চাঁদপুরে বেশ জনপ্রিয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাত্র পাঁচশ ৭৮ জন খাঁচায় মাছ চাষি ছিলো এ জেলায়। তখন মাছের উৎপাদন ছিলো দুইশ ২৭ মেট্রিক টন। আর খাঁচার মোট আয়তন ছিলো ১০ হাজার সাতশ ৩৯ ঘনমিটার। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে খাঁচায় মাছ চাষি বেড়ে হয়েছে দুই হাজার চারশ ৪০ জন। যেখানে মাছের উৎপাদন হয়েছে এক হাজার চার মেট্রিক টন। খাঁচার মোট আয়তন ৪৫ হাজার তিনশ ৩৫ ঘনমিটার। তবে খাঁচার দৈর্ঘ ১৮ দশমিক ৫৮ ঘণমিটার অপরিবর্তিত রয়েছে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে চাঁদপুরে দুই হাজার ভাসমান খাঁচায় বছরে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচশ মেট্রিক টন তেলাপিয়া মাছ। যা চাঁদপুরের স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, খাঁচার মাছ খুব সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। তবে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে চাষিরা কষ্টে আছেন। আমরা সরকার কাছে আবেদন করেছি কৃষির মতো মাছের খাদ্যের দামেও যাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলো থেকেও যাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয় সে অনুরোধও জানিয়েছি। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা ঘুরে ঘুরে মাছ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি।

আপন দেশ ডটকম/আরইউ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়