Apan Desh | আপন দেশ

স্ত্রী বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দেন স্বামী, ১০ বছর পর...

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:০১, ৬ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২২:৫৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৩

স্ত্রী বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দেন স্বামী, ১০ বছর পর...

ছবি: আপন দেশ ডটকম

পটুয়াখালীর যৌনপল্লীতে স্ত্রীকে বিক্রি করে বিদেশ গিয়েছিলেন স্বামী। গর্ভপাত করে সন্তানও হত্যা করেছেন। এদিকে যে টাকায় বিক্রি করা হয়েছে তাতে ১০ বছর বন্দি থাকতে হয়েছে ওই স্ত্রীকে। মুক্তি পেয়েছেন ওই নারী। দেশে ফিরেছেন স্বামীও। এখন স্ত্রী হিসাবে মেনে নিচ্ছে না স্বামী। দাবি নিয়ে স্বামীর বাড়ী গেলে উল্টো মারপিট করা হয়েছে। এমন নির্মম ঘটনা পটুয়াখালীতে। 

স্ত্রীর অধিকার ফিরে পেতে বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ওই নারী পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ভুক্তভোগী নারীর নাম সাহিনুর বেগম। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ওই নারী দাবী করেন, বরিশাল সদর উপজেলার ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়া গ্রামের মৃত্যু জালাল খানের ছেলে মো. জাহিদ খানের সঙ্গে ১৪ বছর আগে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক সাহিনুর বেগমের বিয়ে হয়।

সাক্ষী ছিলেন স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গসহ দুই পরিবারের লোকজন। বিয়ের প্রায় ২ বছর পর জাহিদ বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সাহিনুরের কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে শুরু হয় শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন। একদিন নির্যাতনের পরে চিকিৎসার নাম করে সাহিনুরকে বরিশাল শহরে নিয়ে আসে। কিছু ওষুধ খাওয়ায়। সে সময় সাহিনুর বেগম ৮ মাসের অন্তস্বত্ত্বা ছিল। সেখান থেকে তাকে পটুয়াখালী নিয়ে আসে। জাহিদের বোন পরিচয় দিয়ে এক বাসায় রেখে জাহিদ চলে যায়। পরে সাহিনুর জানতে পারেন তাকে পটুয়াখালী যৌনপল্লীর দালালের কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। আর সেই টাকা দিয়েই বিদেশ পাড়ি দেন স্বামী জাহিদ খান। 

এদিকে ওষুধ খাওয়ার ২০ দিন পরে একটি মৃত সন্তান প্রসব করে সাহিনুর। দীর্ঘ ১০ বছর যৌনকর্মের পর মুক্তি মেলে সাহিনুরের। এখন নিজে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। সাম্প্রতি তিনি জানতে পারেন তার স্বামী জাহিদ খান দেশে ফিরেছেন। খবর পেয়ে গত ৫ ডিসেম্বর সহিনুর তার এক পরিচিত জনকে নিয়ে জাহিদের বাড়িতে যান। এ সময় পথে চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাহিদকে দেখতে পায়। পরিষদের পথেই জাহিদের বাড়ি। সাহিনুরকে দেখে জাহিদ একটি দোকানে নিয়ে বসায় এবং তিনি কেন সেখানে গেছেন সে জন্য তাকে গালমন্দ করতে থাকে।

সাহিনুর বলেন, আমি স্ত্রী বলে দাবী করলে আমার উপর চড়াও হয়। একপর্যায় ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়ার ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজন ও স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার লিটনের সহযোগীতায় পরিষদের এক রুমে আটকিয়ে আমাদেরকে মারধর করে। ওই সময় আমাদের সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যায় জাহিদের লোকজন। খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, বন্দর থানা পুলিশের মাধ্যমে আমাদেরকে উদ্ধার করে পটুয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়। সাহিনুর বর্তমানে পটুয়াখালী শহরে বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের চর খাগকাটা গ্রামে।

সাহিনুর সংবাদ সম্মেলনে কান্না জরিত কন্ঠে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমি কি অপরাধ করেছি ,আমার জীবনটা কেন এমনভাবে চলবে। আমিতো স্বামীর সংশার করতে চাই। আমাকে যখন বিয়ে করা হয়েছে তখন আমি সবে মাত্র সবালিকা হয়েছিলাম। সেই থেকে আমাকে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। আমি আমার স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে চাই। আর না হলে আমি বিচার চাই।

আপন দেশ ডটকম/ সবুজ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়