Apan Desh | আপন দেশ

দাম বাড়েনি বাজারে এমন পণ্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৭ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৪:১০, ১৭ মার্চ ২০২৩

দাম বাড়েনি বাজারে এমন পণ্য নেই

ছবি : আপন দেশ

নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না, নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। মনিটরিং সেল বাজারে কাজ করছে-এমন খবর গণমাধ্যমে পাওয়া গেলেও বাজারে এর কোনো ছাঁপ নেই।

আজ শুক্রবার (১৭ মার্চ) বাজারে ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির কোনো খবর নেই। এমন কোনো নিত্যপণ্য মিলছে না, যে পণ্যের দাম বাবাড়েনি। রমজানের আগে বেশি বেড়েছে সবজির দাম। নিত্যপণ্যের বাজার বেশ কয়েক মাস ধরে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। এর মধ্যে রোজার পণ্য ছোলা ও খেজুরের দামও গত বছরের চেয়ে এবার বেশি। ফলের দামও চড়া। 

শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে একসঙ্গে পুরো মাসের বাজার না কিনতে ক্রেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজারে বিশেষ তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ অনুরোধ জানান।

ভোক্তাদের উদ্দেশে মনজুর মোহাম্মদ বলেন, সামনে রোজা। দয়া করে আপনারা এক মাসের বাজার একসঙ্গে কিনতে যাবেন না। আপনারা ১০ দিনের বা এক সপ্তাহের বাজার করেন। হঠাৎ বেশি পণ্য কিনলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। তখন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। এ কারণে অনুরোধ করবো, আপনারা একসঙ্গে পুরো মাসের বাজার করবেন না।

অন্যদিকে ছুটির দিনে বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি ৮০ টাকা। ৪০ টাকা কেজি টমেটো। এ ছাড়া শিম ৪০-৫০ টাকা, করলা ১০০-১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০, পটল ৮০, ঢেঁড়স ১০০, কচুর লতি ১০০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ১২০ ও ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। এ ছাড়া আকারভেদে লাউ ৫০-৬০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

আজকের বাজারেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা; যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ৩৫০ টাকা। লেয়ার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজিতে।

বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। বাজারে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০-১১০০ টাকা কেজিতে।

আমদানি বন্ধের খবরে বাজারে আগের চেয়ে কেজিতে ২/৩টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বড় রসুন ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। ছোট রসুনের বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এ ছাড়া আদা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান মসুর ডাল ১২০-১২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা আগে ছিল ৭০ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। বাজারে বর্তমানে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৮৭ টাকা। লবণ ৩৮-৪০ টাকা কেজি।

ফার্মের মুরগির ডিম এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। হাঁসের ডিম ১৮০-১৯০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯০-২০০ টাকা।

এদিকে রোজাকে সামনে রেখে ফলের দামও বাড়ছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আপেল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়; যা গত মাসে ছিল ২২০ টাকা। আর মোটামুটি ভালো মানের খেজুর কিনতেও গুণতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা। আমিরাতের নাগাল, দাবাস ও লুলু খেজুরের দাম ছাড়িয়েছে ৬০০ টাকা। সৌদি আরবের আজোয়া, আম্বার কিংবা জর্ডানের মরিয়ম খেজুর কিনতে হলে গুণতে হচ্ছে হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি।

মালিবাগ কাঁচা বাজারের বিক্রেতা হাদিউজ্জামান বলেন, কয়েকদিন ধরেই সবজির দাম বাড়তি। নতুন সজনে, বরবটি, কচুরলতি এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর পুরোনো সবজির (শীতের সবজি) দামও বেড়েছে। 

সেগুনবাগিচা বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের সত্ত্বাধিকারী জামাল মিয়া বলেন, দাম তো বাড়াছেই। তবে এখন রমজানের যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য আছে বাজারে। 

হাজারীবাগ সিকসন ফলের পাইকারি আড়তদার আল আমিন বলেন, রমজানের আগেই ফলের দাম বেড়েছে। বিক্রিও কমেছে। দাম আরো বাড়তে পারে। ফলের আমদানি বেশ কমেছে। বিশ্ববাজারেও ফলের দাম চড়া।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেশি, এর মধ্যে মৌসুমি সবজি আসছে কম। তাতে বাজার একটু চড়েছে। রোজার প্রথম দিকেও বাজার এমনই থাকবে। তবে শেষ দিকে দাম কমে আসবে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় সবজির বাজারে বড় ধরনের কারসাজির সুযোগ কম।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি শামসুল আলম বলেন, সরকার জনগণকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ভোক্তার অধিকার রক্ষার বিষয় সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বৃহস্পতিবার এক সভায় জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পোলট্রি পণ্যের দাম বেড়ে আছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্য, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না।

আপন দেশ/আরএ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়