Apan Desh | আপন দেশ

দেশে কোটিপতি আমানতকারী প্রায় এক লাখ ১০ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২১ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১১:০৯, ২১ মার্চ ২০২৩

দেশে কোটিপতি আমানতকারী প্রায় এক লাখ ১০ হাজার

ফাইল ছবি

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। এর মাঝে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে। দেশে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাবের সংখ্যা এখন এক লাখ নয় হাজার ৯৪৬টি। সোমবার (২০ মার্চ) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, তিন বছরের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারী হিসাব বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি। আর দুই বছরে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজারটি। আর গত এক বছরে বেড়েছে সাত হাজার ৯৭০টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ১৬৭টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৯৪৫টি হিসাব। তাদের হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। 

এ ছাড়া ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির টাকার হিসাব রয়েছে তিন হাজার ৮৪৫টি, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১৮৩৩টি, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ১৪৩টি, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটি ৮৮৭টি, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি ৪৭২টি এবং ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩১৫ আমানতকারীর হিসাব। ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৫৭৭টি। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬২টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ দুই লাখ ২৯ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। এই হিসাবগুলোতে জমা ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এক লাখ নয় হাজার ৯৪৬টি। কোটি টাকার উপরে এসব হিসাবে জমা আছে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে সাত হাজার ৯৭০টি। দুই বছরে বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬টি এবং তিন বছরে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব।

২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি জমা হওয়া এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি হিসাবে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল পাঁচ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন; অন্যদিকে কিছু মানুষের অর্থবিত্ত বেড়েছে। অনেকেই সম্পদশালী হয়েছেন। এভাবে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে কোটি টাকার হিসাব বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে দেশের কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে।

তিনি বলেন, কোটি টাকার হিসাব বাড়ার আরেকটি কারণ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। লোকজনের কাছে যে বাড়তি অর্থ আছে; তা বিনিয়োগ করতে না পেরে ব্যাংকে রেখে দিয়েছে। অনেক সময় বাড়তি অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়, কিন্তু শেয়ারবাজারে অস্থিরতার করণে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন শর্তের কারণে নিরাপদ হিসেবে ব্যাংকে আমানত রাখেন। এসব কারণেই বড় আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়