Apan Desh | আপন দেশ

সবজির দাম কমলেও খুশি নন ক্রেতারা, অন্য পণ্যে সুখবর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২ জুন ২০২৩

আপডেট: ১২:৩৬, ২ জুন ২০২৩

সবজির দাম কমলেও খুশি নন ক্রেতারা, অন্য পণ্যে সুখবর নেই

ফাইল ছবি

নিত্যপণ্যে বাজটের ইতিবাচক প্রভাব নেই। ক্রেতারা নতুন ঘোষিত বাজেটে সুখবর আসবে বলে আশা করছিলেন। তবে নেতিবাচকটা শুরু হয়েছে বাজেট প্রস্তাবের আগে থেকেই। 

দাম কিছু কমমলেও বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকার ওপরে। তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও ডিমসহ মাছ-মাংসের দাম অস্থিতিশীল। স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর চাপ কেবলই বাড়ছে। অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শুক্রবার (২ জুন) রাজধানীর বেশ ক’টি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  সিন্ডিকেট এখনো বেপরোয়া, বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি কাটাতে পারেনি সংাশ্লিষ্টরা।  কিন্তু তেমনটি হয়নি বলে মত তাদের।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি বাজারে সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে; যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এ তালিকায় রয়েছে পটল, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, পেঁপে, ঝিঙে, চিচিঙ্গা। তবে করলা, বরবটি, কচুর লতি ও টমেটো এখনো ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে রয়েছে। আর সজনে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

এদিকে ঈদের পর থেকে দফায় দফায় দাম বেড়ে আলু এখনো প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা পেঁয়াজ ও আদার দামেও। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাজারভেদে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা আর আদার দাম বাড়তে বাড়তে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছে। এ দুই পণ্যের দাম রমজানের ঈদের পর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তেল, চিনি, আটা-ময়দার দামও বেড়ে চড়ায় আটকে রয়েছে। পাশাপাশি আছে কিছু পণ্যের সরবরাহ সংকটও। যেমন- প্যাকেটজাত চিনি ও ময়দা অধিকাংশ দোকানে নেই। বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও মুদি দোকানিরা বলছেন ঘাটতি আছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে অধিকাংশ তেল-চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানি নতুন করে পণ্য সরবরাহ করেনি। দ্রুত সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা খুচরা ব্যবসায়ীদের।

আজ প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকা ও সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে টানা কয়েক সপ্তাহ থেকে অস্থির ফার্মের ডিমের দাম। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম একই রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও আরও কমেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে প্রতি হালি ডিমের দাম এখনো ৫০ টাকা।

অন্যান্য নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপ ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছগুলোর দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছগুলোর দাম বেড়েছে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে দেখা গেছে, চাষের পাঙ্গাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা; যা এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা; যা আগে কেনা যেত ১৮০-২০০ টাকায়।

মালিবাগ বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রেজাউল আমিন বলেন, তেল, চিনি, ডালের মতো আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর দাম যে হারে বেড়েছে, ভেবেছিলাম বাজেটে সেসব পণ্যের দাম সহনীয় করতে কোনো না কোনো পদক্ষেপ থাকবে। কিন্তু নেই। বরং দেখলাম, অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে। সেজন্য বলা যায় বাজেট আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতার জন্য কোনো সুখবর নিয়ে আসেনি।

মগবাজারের সবজি বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, পটল-ঢ্যাঁড়সের মতো গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমেছে। বাজারে এখন সবজির আমদানি গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বেশি।

যাত্রাবাড়ী বাজারে মুদি দোকানি আবুল হোসেন বলেন, তেলের এখনো সংকট রয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি উধাও। ঈদের আগে আবারও তেলের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।

মেরাদিয়া হাটের খুচরা সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর বলেন, বৃষ্টি নেই বললেই চলে। অতিরিক্ত গরমে সবজির সরবরাহ কম। পণ্য ঢাকায় কম আসায় কারওয়ান বাজারসহ পাইকারি বাজারগুলোতে সবজির দাম বাড়তি। যার প্রভাব পরছে খুচরা বাজারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘বাংলাদেশে পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরবরাহ বা আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে তা কমেনি, বরং বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে দাদন ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, মিল মালিকরা বিভিন্ন পর্যায়ে পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন। অর্থাৎ মধ্যস্বত্বভোগীরা কাঠামোগতভাবে মূল্য নির্ধারণ করেন।’

তিনি বলেন, ‘খুচরা ও পাইকারি বাজার মিলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে, যারা বিভিন্ন পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন। ফলে সরবরাহের সঙ্গে দামের যে সম্পর্ক, সেটি দেখা যায় না। কৃষক দাম পান না। সরবরাহ বাড়া-কমার সঙ্গে দাম নির্ধারণ হবে, এটিই অর্থনীতির নিয়ম। কিন্তু এর মাধ্যমে দাম নির্ধারণ না হয়ে ক্ষমতা ও ক্ষমতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে দাম নির্ধারণের কারণে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি চলমান। এর কারণে নতুন দরিদ্রও বাড়ছে। আবার ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়ার জন্য সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করা হলেও পরে তা আর সমন্বয় করা হয় না। বাজারে এক ধরনের একচেটিয়া ব্যাপার গড়ে উঠেছে।’

সাবেক খাদ্য সচিব মো. আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, আমাদের সংরক্ষণ দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে উৎপাদন বেশি হলেও সুফল মেলে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে টাকার মান কমেছে। এতে স্থানীয় কেনাকাটায়ও প্রভাব পড়েছে। যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেশনের মাধ্যমেও মূল্য বাড়িয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাই এখন সে কথা বলছেন। সিন্ডিকেশন এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে এটি থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে এ থেকে বের হয়ে আসতেই হবে।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়