Apan Desh | আপন দেশ

গাংনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অডিট অফিসারকে ঘুষ দিতে শিক্ষকদের থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন অধ্যক্ষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১৬ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৮:৪৮, ১৭ মার্চ ২০২৩

অডিট অফিসারকে ঘুষ দিতে শিক্ষকদের থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন অধ্যক্ষ!

ফাইল ছবি

‘কাগজপত্রে সমস্যা আছে। পার পাওয়া যাবে না। আগের মতো ম্যানেজ করতে হবে। এটাই একমাত্র রাস্তা। আপনারা কেউ উপরের অফিসে যানও না, বুঝেনও না। রক্ষা পেতে অডিট অফিসারকে ঘুষ দিতেই হবে। অডিট অফিসার একা না। তার বসও আছে। তাকেও ম্যানেজ করতে হবে। কম করে হলেও চেয়েছেন ২০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে তাকে পাঁচ লাখ দেয়া হয়েছে। বাকিটার জন্য সময় নিয়েছি।

অডিটে অনাপত্তি পেতে ওই ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে ৫০ জন শিক্ষককে জনপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা এবং ২০জন কর্মকর্তা-কর্মচারির প্রত্যেককে ১১ হাজার ৫০০টাকা ধার্য করেছেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ। কয়েকজন টাকা দিয়েছেনও। বাকিরা সংগ্রহে আছেন।  

ঘটনাটি ঘটেছে সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন-এর নিজ জেলা মেহেরপুরের গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে।

এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা। এই কলেজের একজন প্রভাষক। তাকে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই পদটিকেই তিনি অধ্যক্ষ হিসাবে চালিয়ে নিচ্ছেন। কলেজের সঠিক-বেঠিক কাগজপত্র তার টেবিলেই।

এবার গত মাসে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালকের অফিস থেকে অডিটের জন্য চিঠি যায় গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে। অডিট কর্তা ছিলেন মোঃ আলমগীর হাসান। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অডিটের দিনক্ষণ দিলেও দু’দফায় বদল করে গত ৩ মার্চ কলেজ পরিদর্শনে যান। অডিটে বেশকিছু ঘাপলা ধরা পড়ে আলমগীর হাসানের কাছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে বলেন।  

এদিকে মনিরুল ইসলাম কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে অডিট অফিসারকে ম্যানেজ করতে ২০ লাখ টাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সবাই ২০ মার্চের মধ্যে টাকা জমা দিতে বলেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন টাকা জমাও দিয়েছেন। ঘুষের টাকার মাত্রা বেশি হয়েছে বলে কয়েকজন শিক্ষক তা পরিশোধে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। টাকা উত্তোলনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) মিটিং করেন। মিটিংয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানান, গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন অজুহাতে মনিরুল ইসলাম দফায় দফায় টাকা নিয়েছেন। এবার অডিট অভিসারকে ম্যানেজ করতে একমাসের বেতনের সমপরিমান টাকা চেয়েছেন। সে হিসাবে প্রতি শিক্ষককে দিতে হবে ৩৫ হাজার টাকা। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জন প্রতি দিতে হবে ১১ হাজার ৫শ’ টাকা করে। এতে করে ২০ লাখ টাকা উঠাচ্ছেন তিনি।

বিষয়টি জানতে কথা হয় অডিট অফিসার আলমগীর হাসানের সাথে। তিনি বলেন, গত ৩ মার্চ গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সরকারি বিধি-বিধান অনুযায়ি কাগজপত্র চেয়েছি। কিছু কাগজ সাথে নিয়ে এসেছি, কিছু ই-মেইলে পাঠিয়েছে। কাগজপত্রগুলো সময় নিয়ে দেখব।

২০ লাখ টাকা ঘুষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে ঘুষ দেয়ার তথ্যটি ভিত্তিহীন।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ওলিউল্লাহ মোঃ আজমতগীর-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। ঘটনাটি সঠিক হলে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও অ্যাকশানে যাব।     

ঘুষের জন্য ২০ লাখ টাকা উত্তোলন ও বাকবিতণ্ডা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, অডিট অফিসার খুব ভালো মানুষ, ঘুষের কথা আসছে কেন বুঝলাম না। আমি এ বিষয়ে উপকমিটি করে দিয়েছি তারা বিষয়টি দেখছেন। শিক্ষকদের মধ্যে ২৬ জনের কাগজপত্র পেয়েছি। শিক্ষকদের বলা হয়েছে দ্রুত কাজগ দিতে। এ নিয়ে কথা হয়েছে। ২০ মার্চের মধ্যে বাকিরা কাগজ দেবে।  

 আপন দেশ/এবি 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়