Apan Desh | আপন দেশ

২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাস, সতর্কবার্তা দিল মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২১:৫২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাস, সতর্কবার্তা দিল মন্ত্রী

ফাইল ছবি

দেশের ২৮ জেলায় ছড়িয়েছে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ। এজন্য মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ১০টি আইসিইউ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পাশাপাশি জ্বর-কাশি-খিঁচুনির উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান শুক্রবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হয়েছে এই নির্দেশনা।

নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।

গত সোমবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে অধিদফতর থেকে জানানো হয়, দেশের ২৮টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া ও সিংগাপুরে অসুস্থ শূকরের মাধ্যমে সর্বপ্রথম নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়লেও বাংলাদেশ ও ভারতে বাদুরের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ মেলে। তাই শীতকালে খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘কাঁচা রস, পাখি খাওয়া ফল খেলে এই রোগ হয়। বাদুড় এই ভাইরাস বহন করে। বাদুড় খেজুরের রস পান করলে সেটি মানুষ পান করলেও হয়। অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শে এলে দ্রুত ছড়ায়। তখন মাল্টিপল সংক্রমণ হয়।

জাহিদ মালেক বলেন, এই ভাইরাস থেকে রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা টিভিসি তৈরি করেছি। সংক্রমণব্যধি হাসপাতালে আলাদা ইউনিট করে চিকিৎসা দিচ্ছি।

চিকিৎসকরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ধরন কিছুটা অন্যান্য ভাইরাসের মতো হলেও এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়েছে। মূলত ফলমূল খাওয়া বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক। ওই বাদুড় অবশ্য নিজে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগের কোনো টিকা ও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় সতর্কতা ও সচেতনতা এ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানিয়েছেন, দেশে ২০০১ সালে প্রথম নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে গড় মৃত্যু ৭১ শতাংশ। বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়। যখন খেজুরের রস সংগ্রহ শুরু হয়, তখন থেকে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে বা জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তি ইত্যাদি হতে পারে। এক বা দুই দিনের মধ্যে রোগী অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। রোগ সেরে যাওয়ার পর মস্তিষ্কে সংক্রমণ ও খিঁচুনি ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

সহায়ক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের উপশম করা হয়ে থাকে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই রোগের কোনো টিকা বা বিশেষ চিকিৎসা নেই। বাদুড় ও রুগ্ন শূকর থেকে দূরে থেকে এবং অপরিশুদ্ধ খেজুর রস না পান করে এই রোগের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

আপন দেশ ডটকম/ এবি

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়