Apan Desh | আপন দেশ

‘রাজনীতি অঢেল অর্থ সম্পদ উপার্জনের পথ নয়‘

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০৪, ৩০ মে ২০২৩

আপডেট: ২২:০৫, ৩০ মে ২০২৩

‘রাজনীতি অঢেল অর্থ সম্পদ উপার্জনের পথ নয়‘

প্রতীকী ছবি

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের পৃথক দুই মামলায় ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানকে বিচারিক আদালতের দেয়া কারাদণ্ড বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত।

একই সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজাও বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। বিচারিক আদালত আমানকে ১৩ বছর ও সাবেরাকে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল। অন্যদিকে টুকুকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমান দম্পতি ও টুকুর আপিল খারিজ করে মঙ্গলবার (৩০ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এ রায় দেয়।

রায়ে বলা হয়েছে, এর অনুলিপি পাওয়া সাপেক্ষে দণ্ডপ্রাপ্তদের সংশ্লিষ্ট অধস্তন আদালতে দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলে, রাজনীতিবিদরা হবেন ‘রক্ষক’ ‘ভক্ষক’ নন। আদালত আরও বলে, ‘অর্থ ও সম্পদ উপার্জনের অনেক বৈধ পথ রয়েছে। রাজনীতি অঢেল অর্থ সম্পদ উপার্জনের পথ নয়।’

আদালতে আমান দম্পতির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।

আরও পড়ুন: ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার দুই সপ্তাহের সাজাপ্রাপ্তদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এরপর আপিল বিভাগে তারা আপিলের সুযোগ পাবেন।

আমান দম্পতির আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তারা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। দুজন নির্ধারিত সময়েই আত্মসমর্পণ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

তিনি বলেন, একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রী খালাস পেয়েছেন। কিন্তু এ দুজনের দণ্ড বহাল রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের নামে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা অবশ্যই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ আমান ও সাবেরার বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। এতে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। সাবেরার বিরুদ্ধে স্বামী আমানকে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। বিচার শেষে একই বছরের ২১ জুন আমানকে ১৩ বছর ও সাবেরাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।

পরে দণ্ড ও সাজা থেকে খালাস চেয়ে দুজন হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট আপিল মঞ্জুর করে দুজনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা চাঁদকে আরো ৩ দিনের রিমান্ড

খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে দুদক। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৬ মে আপিল বিভাগ এক রায়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে মামলার শুনানির নির্দেশ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ মে শুনানি শেষে এ রায় হলো।

৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে দুদক। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর টুকুকে ৯ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয় বিশেষ আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে তাকে খালাস দেয়।

পরে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়টি বাতিল করে এ মামলার পুনঃশুনানি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেয়। গত ১৭ মে আপিলের ওপর শুনানি শেষে এ রায় হলো।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলে, রাজনীতিবিদেরা রাজনীতিতে জড়িত হবেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে। এটি দেশ ও দেশের সব জনগণের জন্য একটি মহান ত্যাগ ও নিষ্ঠার কাজ। রাজনীতিবিদরা হবেন ‘রক্ষক’ তারা ‘ভক্ষক’ হবেন না। হাইকোর্ট বলেছে, ‘দুর্নীতি সব বয়স ও বর্ণের মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি সবচেয়ে আঘাত করে দুর্বল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। দেশের জনগণ বিশেষ করে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যে, তারা কেবল দুর্নীতির শিকারই নন, এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল খেলোয়াড়।’

রায়ে বলা হয়, অর্থ ও সম্পদ উপার্জনের অনেক বৈধ পথ রয়েছে। বৈধ ব্যবসা বা অন্য পেশায় অর্থ উপার্জন করা যায়। কিন্তু রাজনীতি অঢেল সম্পদ অর্জনের পথ হতে পারে না। রাজনীতিবিদরা অর্থ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারেন না।

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা টুকু-আমানের সাজা বহাল

হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে শিশুদের প্রসঙ্গে বলা হয়, যতক্ষণ না আমরা তাদের অন্যরকম হতে সাহায্য করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সচেতনভাবে সত্যবাদী হয়। তাই বাল্যকাল থেকে শিশুদের সততা ও অসততার পার্থক্য বোঝানো উচিত।

আদালত বলে, খারাপ প্রকৃতির লোকেরা চুরি করা সম্পদ লুকাতে এবং সমালোচকদের চুপ করতে একে অপরকে সহযোগিতা করে।’

রায়ে আরো বলা হয়, একটি বৈশ্বিক পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশের নাগরিকেরা বসে থাকতে পারে না। আমরা জানি সফল হওয়ার একমাত্র পথ হলো সবাইকে এ পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত করা। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে এবং যেখানেই হোক বা যেভাবেই হোক সমাজ থেকে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো অপরাধ একেবারে নির্মূল করতে হবে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ