Apan Desh | আপন দেশ

আগুন ঝরানো উত্তাল মার্চ শুরু

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:১২, ১ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৩:১৬, ১ মার্চ ২০২৩

আগুন ঝরানো উত্তাল মার্চ শুরু

ফাইল ছবি

আগুন ঝরানো উত্তাল মার্চ শুরু হল। মাসটি এলেই সামনে চলে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; তার দেয়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। এই আগুন ঝরানো যে ভাষণ দেহের মধ্যে এক শিহরণ তোলে দেহ-মনে। আরো মনে পড়ে ৩০ লাখ শহীদের কথা। মনে পড়ে সহায়-সম্ভ্রম হারানো অগুনতি মা-বোনের কথা। 

মার্চ মাস আমাদের গৌরবের মাস। অহংকারের মাস। স্বাধীনতা ঘোষণার মাস। আনুষ্ঠানিক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস। মার্চ মাস বাঙালির জাতীয় জীবনে একই সঙ্গে আনন্দ-বেদনার এবং রক্তস্নাত নবজন্মের।

এলো সেই আগুন ঝরানো মার্চ। একাত্তরের মার্চ ছিল মুক্তিকামী জনতার আন্দোলনে উত্তাল। বাংলা ছিল অগ্নিগর্ভ। ঢাকা জুড়েই স্লোগান আর স্লোগান। ‘জাগো জাগো, বাঙালি জাগো’, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো-সোনার বাংলা মুক্ত করো’-এমন হাজারো স্লোগানে ঢাকাসহ উত্তাল ছিল সারাদেশ।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১ মার্চ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার একতরফা ঘোষণার বিরুদ্ধে ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। ঢাকা হয়ে যায় উত্তপ্ত। শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসেন। জনতা ছুটে আসেন রাজপথে, পল্টন ময়দান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ঢাকা শহর হয়ে ওঠে স্লোগানের নগরী। 

ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) এ সময় পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণা শুনে দর্শকরাও বেরিয়ে আসে গ্যালারি ছেড়ে। পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

আর কোনো আলোচনা নয়, পাক হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমশ বেগবান হতে থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু স্বভাবসুলভ দৃঢ়তা নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিনা চ্যালেঞ্জে আমি কোনো কিছুই ছাড়ব না। ছয় দফার প্রশ্নে আপোস করব না। দুই থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল চলবে। সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।’

৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

ওই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যার হাতে যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেন। শত্রুর মোকাবিলা করার দৃপ্ত আহ্বানও ভেসে আসে বজ্রকণ্ঠে।

এ ভাষণেই বাঙালি পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠে। স্বাধীনতার আহ্বানে দেশবাসী এক হয়।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র চালাতেই থাকে। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে।

আসে ২৫ মার্চ; কালরাত্রি। পাক হানাদার বাহিনীর ভারি অস্ত্র, কামান নিয়ে ‘অপারেশন সার্চলাইট’র নামে এ দেশের ছাত্র-জনতাসহ নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান। 

শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, অগ্নিঝরা দিন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন একটি স্বাধীন দেশ- লাল সবুজের বাংলাদেশ।

আপন দেশ/আরইউ/এবি
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়