Apan Desh | আপন দেশ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০০, ৮ মে ২০২৩

আপডেট: ১০:৫৮, ৮ মে ২০২৩

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আজ

ফাইল ছবি

বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আজ সোমবার (৮ মে)। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখের এই দিনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অনেক কবিতা ও গান ছিল সীমাহীন প্রেরণা উৎস্য।

রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কবির গান-কবিতা এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহস যোগায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, আমাদের প্রতিটি সংগ্রামে চিরকালই কবির রচনাসমূহ প্রাণের সঞ্চার করে।

বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (৭ মে) দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে।

কবির অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত স্রষ্টা। চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি।’  

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী এই বাঙ্গালি কবিকে স্মরণ করবে তার অগণিত ভক্ত। শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষীরা কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও পরম শ্রদ্ধায়। এবার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সমাজ সংস্কার ও রবীন্দ্রনাথ।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী  উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে ।  

এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর, এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। 

ছায়ানট, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমিসহ কয়েক জায়গায় সোমবার গান-নাটকের পাশাপাশি চিত্রকলা প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিগুরুকে স্মরণ করা হবে।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে দুদিনের রবীন্দ্র উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে ছায়ানট। ২৫ ও ২৬ বৈশাখ (সোম ও মঙ্গলবার) প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হবে। দুদিনই অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।

ছায়ানট জানিয়েছে, দুই দিনব্যাপী এ উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবেন। ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত এ উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে নাটক ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’। মঙ্গলবার (৯ মে) সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির বিশেষ প্রদর্শনী হবে।

দিনটি ঘিরে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৩ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। সোমবার সকাল ১১টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হবে।

সেখানে স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। একক বক্তৃতায় আছেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

রবি ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালায় এ অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়া ‘রঙ-তুলিতে বিশ্বকবি’ শিরোনামে আর্ট ক্যাম্প হবে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি এবং ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে।

একাডেমির চিত্রশালা গ্যালারিতে ৮-১৪ মে পর্যন্ত হবে রবীন্দ্রনাথের উপর অঙ্কিত চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য খোলা থাকছে।

‘আজি হতে শতর্বষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/শত কৌতুহল ভরে/ . . . আজি হতে শতর্বষ পরে/এখন করিছো গান সে কোন নুতন কবি/তোমাদের ঘরে!’

একশ বছরেরও বেশি আগে বাঙ্গালী পাঠকদের প্রতি এই জিঞ্জাসা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। নানা সংকট-আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্র সৃষ্টি আমাদের চেতনায় বরাবর স্পর্শ  করছে এবং করবে অন্তত আরো একশ বছর পরেও-বাঙ্গালি মাত্রই তা বোধ হয় বলতে পারবেন। কবির আশঙ্কার জবাবে আরো বলা যায় শত বছর পরে এখন অনেক নতুন কবি এসেছেন, নব নব সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত স্ফীত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য এবং সংগীতের ভূবন। তারপরেও আমাদের রবীন্দ্রনাথ মাত্র একজন। এখনকার নবীনদের সৃষ্টির উৎসও তিনি। এখনো জীবনের সবকিছুতে হাত বাড়াতে হয় রবীন্দ্রনাথে। তাই, কবির বসন্ত গান শতবছর পরেও ধ্বনিত হয় নবীন কবি আর পাঠকের বসন্ত দিনে।

জন্মের দেড় শতাধিক বছর পেরিয়ে এবং মৃত্যুর অনেক বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ এখনও কেন প্রাসঙ্গিক-এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং প্রয়াত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, বাঙালির এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালির মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্য দিয়ে বাঙালি মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়। দেড়শ বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়