
ফাইল ছবি
বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত কাউন্সিলে বিএনপির সাবেক, বহিষ্কৃত ও নিষ্ক্রিয় অনেক নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ও আলোচিত মুখ শমসের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ দুই পদে থাকছেন।
তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা বলেন, আমাদের দলে শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার যোগ দিচ্ছেন। তারা ভালো পদে থাকবেন বলে আশা করি। দলের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি কো-চেয়ারম্যানের পদ থাকছে।
অন্তরা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আর যারা যোগ দেবেন তারা বিএনপির কোনো পদে নেই। কাউন্সিলে আরও চমক আছে। আরও অনেকে যোগ দেবেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি দলের রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলে যে আমরা সরকারের দালাল হয়ে যাব, এটি তো ঠিক নয়। কোনো জোটে আমরা যাব কিনা, সেটি ঠিক হয়নি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন সমশের মবিন চৌধুরী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ২০০৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন ২০০৯ সালে। বিএনপির হয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। ২০১৪ সালের একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন সমশের মবিন চৌধুরী। তখন তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। তবে এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাড়ে তিন মাস আগে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি। অবশ্য তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সমশের মবিন।
অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী তখন আলোচনায় এসেছিলেন।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপি আমাকে দেড় বছর ধরে বহিষ্কার করে রেখেছে। আমি তো দল ছাড়িনি। একজন বহিষ্কৃত লোক কত বছর একটা পতাকা টেনে নিতে পারে? এখন আমার পরিচয় কী? মারা গেলে আমার পরিচয় কী হবে? কোন ব্যানারে আমি বক্তব্য দেব? আমার জন্ম তো রাজপথে। যেহেতু বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেছে, সেহেতু আমাকে এখন তৃণমূল বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। আমি সেখানেই যাচ্ছি। আশা করি শীর্ষ পদেই থাকব। তিনি বলেন, বিএনপির মতো একটা বড় দলকে কেউ ভাঙতে পারে, এমন চিন্তা আমার নেই।
তৃণমূল বিএনপির একটি সূত্র জানায়, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় সবকিছু হচ্ছে। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নামের সঙ্গে মিল থাকা তৃণমূল বিএনপিতে নতুন চমক থাকছে। পর্যায়ক্রমে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং নিজ থেকে ছেড়ে দেয়া নেতারাও যোগ দেবেন। এ তালিকায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ-সদস্য আবদুস সাত্তার ভুঁইয়াও আছেন।
আরও পড়ুন <> শারীরিক অবস্থার অবনতি, সিসিইউতে খালেদা জিয়া
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। এরপর ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। কমিশন তখন তাদের নিবন্ধন দেয়নি। পরে দলটি আদালতের দ্বারস্থ হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। নিবন্ধন পাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় নাজমুল হুদা মারা যান। এখন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছিলেন, দল ভাঙার চেষ্টা করছে সরকার। এরপর বিভিন্ন সময় এই অভিযোগ এসেছে। সম্প্রতি ইসিতে নতুন দল নিবন্ধনের সময় বিএনপি ভাঙার বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। বিএনএম ও বিএসপি নামে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি। বিএনএমের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা। এই দল গঠনের পেছনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে, এমন অভিযোগ তখন করেছিলেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যাদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই, তাদের কিছুই নেই। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে বহুবার দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু তাতে বিএনপির কিছু হয়নি। যারা বিএনপিকে ভাঙতে চেয়েছিলেন, তারা নিজেরাই ভেঙে পড়েছেন।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।