Apan Desh | আপন দেশ

রাজনীতির ইস্যু যখন হিরো আলম!

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ০১:১৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১২:৫০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রাজনীতির ইস্যু যখন হিরো আলম!

ফাইল ছবি

আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। সঙ্গীত ভিডিও মডেল, অভিনেতা, গায়ক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তি। এই নাগরিক জীবনযুদ্ধের পাশাপাশি নেমেছিলেন ভোটযুদ্ধে। তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই হয়েছে, হচ্ছে।

এরশাদের জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা তিনি। তবে দলটি তাকে সমর্থন বা প্রতীক লাঙ্গল দেয়নি। স্বতন্ত্রভাবে ভোট করে হেরেছেন হিরো আলম। তবে তার প্রাপ্ত ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন তিনি। বলেছেন, আমার এত ভোট গেল কই? কোটিপতি হিরো আলমকে নিয়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যার যা ইচ্ছা লিখছেন তা-ই। 

এতোদিন হিরো আলম ছিলেন- ব্যঙ্গ বা হাসির পাত্র। ভিউ বাড়ানোর জন্য নানান ধাচের প্রশ্ন আর উত্তরের সংমিশ্রণে কনটেন্ট তৈরি করে মিলিয়ন ভিউয়ার্স পেয়েছেন ইউটিউবাররা। ডলার ইনকামের জন্য হিরো আলমকে তোলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মে। সপ্তম শ্রেণি পাস হিরো আলম একজন সংসদ সদস্য হতে চান, তাই নিয়েও মহাউল্লাসে ট্রল চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও নির্বাচন করতে কোনো শিক্ষাসনদের প্রয়োজন নেই। অনেক দেশেই এমন নীতি। ছুঁতোর মিস্ত্রী নিরক্ষর টমাস লিঙ্কনের ছেলে আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও কিন্তু আক্ষরিক অর্থে শিক্ষার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই। 

এবার সমালোচকদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বড় দুই দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। হিরো আলমকে আন্ডার স্টিমেট করছেন তারা। তার প্রার্থী হওয়া এবং ভোটে হেরে যাওয়াকে রাজনৈতিক ইস্যু করেছে করছেন দুই শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দল দুটির সভা-সমাবেশে দুই নেতার বক্তব্যের রসদ ছিল বহুল আলোচিত এই হিরো আলম। 

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের পর অন্য আসনের মতো বগুড়া-৪ আসনেও উপ নির্বাচন হয়। তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন  ফলে হিরো আলম। ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে জাসদের প্রার্থীর মশাল প্রতীকের কাছে হেরেছেন। তবে বগুড়া-৬ আসনে তিনি পাঁচ হাজার ২৭৪ ভোট পেয়েছেন। 

হেরে গিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘সবাই বলছেন- আপনি পাস করেছেন, ভোটাররাও ভোট দিয়েছেন। আমার এত ভোট গেল কই? ফল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগের লোকজন বলছেন, মশাল জিতে গেছে; এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। আওয়ামী লীগের লোকজনও আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছেন। ওই ভোটগুলো গেল কই? এই ফল আমি মানি না। আমাকে চক্রান্ত করে হারিয়ে দিলেও যে ভোট পেয়েছি তাতে আমি বিজয়ী।

হিরো আলমের অভিযোগ, ‘কিছু কিছু শিক্ষিত লোক আমাকে মেনে নিতে চান না। তারা ভাবেন, আমি পাস করলে দেশের সম্মান যাবে, অনেকের সম্মান যাবে। অফিসারদের লজ্জা যে হিরো আলমকে স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে। সে জন্যই আমাকে জিততে দেয়া হয়নি।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হিরো আলম হিরো হয়ে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও অসহায়। তারা হিরো আলমের কাছেও মাত্র ৮০০ ভোটে জিতেছে। তাও চুরির অভিযোগ এনেছেন হিরো আলম।

তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে আবার যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেল, সেই উপনির্বাচনগুলোতে। আমি সে বিষয়ে যাব না। আমি শুধু বলতে চাই, একটি কথা। হিরো আলম (বগুড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী) আজকে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়।  তাদের (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয় ছয়-সাতশ ভোটে।

সেই হিরো আলমের সুরে সুর মিলিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে নিজেদের প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি।

এদিকে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের ক’ঘণ্টা পরই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিকেলে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদকে খাটো করতে বগুড়ায় উপনির্বাচনে হিরো আলমকে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। হিরো আলমের জন্য এতো মায়া ফখরুলের। হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। পার্লামেন্টকে খাটো করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছিল ফখরুলরা।

এদিকে দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা ও জবাব দিলেন হিরো আলম। মির্জা ফখরুলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন,  এই সরকার অসহায় হয়েছে কিনা, আমি জানি না। তবে আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমার ভোটের ফলাফল যে কেড়ে নেওয়া হলো, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমি কার কাছে বিচার দেব।

আর ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বলেছেন, হিরো আলম কারও কান্দের ওপর ভর দিয়ে চলে না। নিজের পরিশ্রম, সংগ্রাম করেই আমি হিরো আলম হয়েছি। আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্ট ছোট করা হয় তবে যখন মনোনয়ন কিনছি, তখন কিন্তু আপনাদের বলা উচিত ছিল, হিরো আলমের কাছে যেন মনোনয়ন বিক্রি করা না হয়। আপনারাই বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। 

আপন দেশ ডটকম/ এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়