Apan Desh | আপন দেশ

নভোচারীরা মহাকাশে কী খান; কীভাবে খান?

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২৫ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১১:৪২, ২৫ মার্চ ২০২৩

নভোচারীরা মহাকাশে কী খান; কীভাবে খান?

ছবি : সংগৃহীত

মহাকাশ সাধারণ মানুষের জন্য অচেনা জগৎ। স্বভাবতই ওই জগৎ নিয়ে কৌতুহল আছে আমাদের। আমরা জানি মহাকাশে মধ্যাকর্ষণ ও মহাকর্ষ শক্তি ভিন্ন রূপে ধরা দেয়।

এমন ক্ষণে নভোচারীরা মহাকাশে কী খান, ভেসে বেড়ানো খাবার কীভাবে মুখে তোলেন, কেমন জীবন কাটান সেখানে, এসব বিসয় নিয়ে বিস্তর কৌতুহলী সাধারণ মানুষ। 

আমেরিকার নভোচারীরা বর্তমানে মহাকাশ অভিযানের জন্য যে পোশাক পরেন, ১৯৮১ সালের পর তার ডিজাইন আর বদল করা হয়নি।
এখন নতুন স্পেসস্যুটের যে ডিজাইন দেয়া হয়েছে, তা নারী নভোচারীদেরও পরতে সুবিধা হবে বলে বলা হচ্ছে। এই পোশাক যদি ছাড়পত্র পেয়ে যায়, তাহলে আর্টেমিস থ্রি মহাকাশ মিশনে নভোচারীরা যাবেন এই পোশাক পরেই।

পাঁচ দশক পর আর্টেমিস থ্রি আবার মানুষ নিয়ে যাবে চাঁদে। কিন্তু ওই খাওয়াদাওয়ার বিষয়গুলো? সেগুলো কীভাবে হবে? বিবিসির ফুড চেইন রেডিও অনুষ্ঠান এ নিয়ে কথা বলেছিল নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী নিকোল স্টটের সঙ্গে। 

সারাক্ষণ পিৎজার কথা ভাবতাম, স্বীকার করলেন নিকোল স্টট। তার দীর্ঘ মহাকাশ কেরিয়ারে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দুটি আলাদা মিশনে ১০০ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন। সেসময় তাকে বিশেষভাবে তৈরি খাবার খেতে হয়েছে।

দেখুন, পিৎজা মানেই ময়দার তৈরি রুটির বেসের ওপরে বেশ ঝুরঝুরে রুটির কিছু অংশ, যা চিবাতে মজা, সেইসঙ্গে ওপরে গলা পনির আর গরম সস, বললেন তিনি।

নিকোল স্টট বলেন, মহাকাশে খাবার তৈরি করতে হয় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা মাথায় রেখে। অর্থাৎ সেখানে রুটি থাকবে না, রুটির গুঁড়ো থাকবে না, থাকলে রুটির গুঁড়ো তো বাতাসে ভেসে বেড়াবে। কাজেই পিৎজা হবে নরম ময়দার বেস দিয়ে।

তিনি বলেন, প্রাতঃরাশে অবশ্য বিশেষভাবে তৈরি ডিম খাওয়া যায়, ছোট সাইজের ডিম ভাজা বা ওমলেটও দেয়া হয়। মহাকাশে নভোচারীরা প্রায়ই স্কুলের বাচ্চাদের মতো এ ওর খাবারে ভাগ বসান।

নিকোল স্টট বলেন, লাঞ্চে আমাদের দেয়া হতো স্যুপ। আর অন্য কিছু খাবার। তবে সব কিছু মোড়া থাকত ময়দার পাতলা রুটি দিয়ে। আর রাতে জাপানি কারি, যা খুবই সুস্বাদু আর আমার খুব পছন্দের।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কোনো থালা-বাটি ব্যবহার করা যায় না। কারণ সেখানে সবই শূন্যে ভেসে বেড়ায়। নভোচারীরা যেসব খাবার খান, তা খুবই প্রক্রিয়াজাত এবং খাবারের ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে সব পানি শুষে বের করে নেয়া হয়। এরপর নভোচারীরা খাবার আগে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাতে গরম বা ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে নরম করে নেন।

নিকোল স্টট জানান, সব খাবার প্যাকেট করা থাকে, নভোচারীদের সেই প্যাকেট থালা হিসেবে ব্যবহার করতে হয় আর খাওয়ার জন্য তাদের দেয়া হয় বিশেষ চামচ। সেই চামচে হাতল থাকে খুব লম্বা। লম্বা হাতল দিয়ে প্যাকেটের ভেতর থেকে ভাত টেনে বের করে কারির ওপর রাখতে হয়। তবে তার জন্য বেশ কসরৎ করতে হয়। ভাতের সঙ্গে কারি মেশাতে গেলে কারির ফোঁটাগুলো ভেসে বেড়ায়। 

ভেসে বেড়ানো খাবার খাওয়া তো কঠিন। কীভাবে খাওয়াটি রপ্ত করেছিলেন প্রশ্নে নিকোল স্টট বলেন, ভাসমান খাবার খাওয়া কিন্তু বেশ মজার ব্যাপার। আমরা চামচে খাবার নিয়ে একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিতাম কিংবা চামচে করে খাবার শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে তা মুখের ভেতর লুফে নিতাম। বেশ মজাই লাগত।

জিানা যায়, মহাকাশে নিজের শরীরকে আর্দ্র রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু মহাকাশে পানি আসবে কোথা থেকে? নভোচারীরা পৃথিবী থেকে অবশ্যই কিছু পানি সঙ্গে নিয়ে যান। আর বাকিটা আসে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা পানি থেকে। মহাকাশযানের জ্বালানি কক্ষ থেকে, বাতাসের আর্দ্রতা থেকে এমনকি প্রস্রাব থেকেও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানি তৈরি করা হয়। 

নাসা দাবি করছে, এই রিসাইকেল করা পানি আমরা পৃথিবীতে যে পানি খাই তার থেকেও অনেক পরিষ্কার।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়