Apan Desh | আপন দেশ

ফের থার্ড পার্টি!

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৭:৪৩, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

ফের থার্ড পার্টি!

ছবি: সংগৃহীত

সরকার এবং রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি। কেউ কিঞ্চিৎ ছাড় দিচ্ছে না। ঠাই দাঁড়িয়ে নিজ হিসাব কষছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উভয় পক্ষের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন পিঁছু হটার কোনো সুযোগ নেই। ডু অর ডাই। লড়াই ছাড়া বাঁচার উপায় নাই। 

এ অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কোনো ভালো লক্ষণ না। রাজনীতির যদি দেশ ও মানুষের জন্য হয় তাহলে তাদেরকে ছাড়ের মনোভাব পোষন করতেই হবে। রাজনীতিকে রাজনীতির মাধ্যমেই মোকাবেলা করতে হবে। দুই পক্ষ অনড় হলে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয়। আর রাজনীতির মাঠে থার্ড পার্টি মঙ্গল বয়ে আনে না। তাতে করে শুধু সাধারণ মানুষের কষ্টই বাড়বে না। পুরনো চিত্র নতুন এবং ভয়ঙ্কর রূপে দেখতে হবে রাজনীতিবিদদের।

সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব কিছু ঠিক থাকলে বাকিমাত্র এক বছর। এ সময়ের মধ্যে দলগুলোকে মাঠ গুছাতে হবে। সে প্রস্তুতি কোনো দলের মধ্যেই বাহ্যিক দেখা যাচ্ছে না। সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে। গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কমিশনকেই গ্রহণ করছে না বিরোধীরা। তারা পুরোদস্তর সরকারেরই পদত্যাগ দাবি করছে। কারণ ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন অতীতের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারা অংশ নিতে চাইছে না। এ দাবির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ দেশে বিনিয়োগকারী ভিনদেশীরাও সুর মেলাচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছর রাজপথে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। দফায় দফায় আন্দোলন করেছে, ব্যর্থও হয়েছে। বহু নেতাকর্মী হারিয়েছে। মামলায় চিড়েচেপ্টা। দলের নীতি নির্ধারকধের ভাবনা, এবারের আন্দোলনে পা পিছলে গেলে রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটবে। তাদের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে ফেরা এমনকি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্খা স্বপ্নে পরিণত হবে। যে কারণে কঠোর মনোভাব নিয়ে কৌশলে এগুচ্ছে দলটি। সরকারের প্রতি হুমকি দিয়েও বলেছেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রাণ দিতে প্রস্তুত আছে।

দলটি তৃণমুল থেকে আন্দোলনকে টেনে এনেছে কেন্দ্রে। চট্টগ্রামের সমাবেশে বলেছেন, লড়াই ছাড়া বিএনপির বাঁচার উপায় নাই। সমাবেশ নয়া পল্টনেই করবার দাবিতেই অনড় আছে। হুশিয়ারি দিয়ে এর আগেও বলেছেন, কারও বাপের রাজত্ব নাকি ! ১০ তারিখ পল্টনেই গণসমাবেশ হবে'। বৃহস্পতিবার রাতেও বলেছেন, নয়া পল্টনেই সমাবেশ হবে এতে কোনো অনাকাঙ্খ্ণিত ঘটনা ঘটলে দায় সরকারকেই নিতে হবে। 

১০ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে লাখো নেতাকর্মীতে সরগরম থাকার আয়োজন, চারদিন আগে থেকেই সেখানে দিবারাত্রি অবস্থান করছে হাজারো পুলিশ। সমাবেশের আড়ালে অন্য কিছু ছিল এমন তথ্য থেকে পল্টনের রাস্তা ফাঁকা করা হয়েছে, বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পার্টি অফিস ভূড়ুতে করে দিয়েছে সরকার। নিজ দলের অফিসে ঢুকতে না পেরে, ডানে-বামের সামনে পিছে নেতাশূণ্য হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বসে পড়ছেন রাস্তায়। 

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি পার্টি অফিসে অনেক চালের মজুদ, পানির মজুদ ছিল। চিনি-ডালের মজুদ ছিল, ১৫টি অবিস্ফোরিত হাতবোমা ছিল। ছুরি-কাঁচি ছিল। ডেগে ডেগে খিচুরি ছিল। এগুলো আনার পেছনে কারণ কী? তা আমরা জানি। বড় জমায়েত হলে এমন হয়। কিন্তু আমরা এখন শুনছি তারা এখানে সমাবেশ করতে এসে বসে পড়ার পরিকল্পনা হিসেবে এ সমস্ত রসদ এনেছিলেন। নয়া পল্টনে ৬ ডিসেম্বর বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষে ৪৯জন পুলিশ আহত হয়েছে। পল্টন কেন? সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে তো সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কালশী চাইতে পারে।  

যারা পল্টনে বসবেন তাদের নেতাদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা রাজনৈতিক সমাধানে ব্যর্থতা কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মির্জা ফখরুল তো আছেন। আপনার কী তাই মনে হয়? এছাড়া কোনো উপায় কী ছিল নাকি? পুলিশ যেভাবে মার খাচ্ছিল, এছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, অদৃশ্য হলেও বিএনপি যোগাযোগ রাখছেন ভিনদেশী মোড়ল শক্তির সঙ্গে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে দেয়া বিবৃতিতে- সমাবেশের কথাও উল্লেখ করেছে।

সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার এক আলোচনায় অভিযোগ করেছেন, বিএনপির সমাবেশ ১০ ডিসেম্বর করার নেপথ্যে একটি দেশ কাজ করছে।

বিএনপির এখনকার ধারনা, নয়া পল্টনে সমাবেশ করতে দিলেও লাভ, না দিলেও ক্ষতি নেই। একটা পজেটিভ রেজাল্ট পাবেনই তারা। অন্ত:ত সরকারের নতুন রূপ উন্মুচিত হবে ওইদিন 

টানা তিন দফা ক্ষমতাসীন থাকায় ভালো কাজের পাশাপাশি সমালোচনার ঝুড়িও প্রায় ভর্তি। জিনিষপত্রে দাম বৃদ্ধি, অনিয়ম, দুর্নীতি আর আধিপত্ব বিস্তারের কারণে নিজেরাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সভা-সমাবেশে। ক্ষুব্ধ জনতা আর বিরোধীদের আন্দোলন-দু‘য়ে মিলে যতেষ্ট ভীতির সঞ্চার করেছে। বেশ কয়েকটি সভাতে দলটির নেতারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা ( বিএনপি) ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, হাজার হাজার লাশ নিতে হবে আওয়ামী লীগকে। তাই ডু অর ডাই পজিশনে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নেতাকর্মীদের। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমাবেশের তিনদিন আগে থেকে রাজপথে থাকবে তার দলের নেতাকর্মীরা।

উভয় দলের কঠোর মনোভাব প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, রাজনীতি মানুষের জন্যই। রাজনীতিবিদদের অবশই একটা ঐক্যে পৌছাতে হবে। দেশ ও মানুষের ক্ষতি করে রাজনীতিক ফায়দা লুটতে চাইলে কী হয় তা জাতি দেখেছে। সে সময়টা দুই যুগও গড়ায়নি। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত শুধু সাধারণ মানুষই নয় রাজনীতিবিদদেরও দিতে হয়। 

তিনি বলেন, রাজনীতিকে রাজনীতির মাধ্যমেই মোকাবেলা করতে হবে। সমঝোতায় আসতে হবে। দুই পক্ষ অনড় হলে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয়। আর রাজনীতির মাঠে থার্ড পার্টি মঙ্গল বয়ে আনে না। দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে শঙ্কা হচ্ছে ফের থার্ড পার্টি ভর করে কিনা!

আপন দেশ ডটকম/ এবি 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ