Apan Desh | আপন দেশ

সিন্ডিকেটের থাবা লবনে, হঠাৎ দরপতন চাষীরা শঙ্কায়

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৩:২২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ০৯:৩৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সিন্ডিকেটের থাবা লবনে, হঠাৎ দরপতন চাষীরা শঙ্কায়

ছবি : সংগৃহীত

মৌসুমের শুরুতে খুশি মনে ছিলেন কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও চকরিয়াসহ উপকূলের লবণ চাষীরা। হঠাৎ লবণের দরপতনে বিপাকে পড়েছেন লবণ চাষিরা। লোকসানের শঙ্কায় এখন তারা। তাদের আগের খুশি আর নেই।

এদিকে দাম কমে যাওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে সিন্ডিকেট। এমনই অভিযোগ লবণচাষীদের। বাজার দর নির্ধারণ এবং লবণ শিল্প বাঁচাতে আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

কুতুবদিয়ায় বর্তমানে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। যা মৌসুমের শুরুতে ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। চাষীরা বলছেন, সব উপকরণের দাম এবং উৎপাদন খরচ বাড়তি।

তাদের অভিযোগ, উৎপাদন ভালো হওয়ায় একটি সিন্ডিকেট কারসাজি করে দাম কমিয়েছে। লবণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং উৎপাদনে চাষীদের আগ্রহ ধরে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ উপকুলবাসীর।

এদিকে হঠাৎ দরপতনে লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ৪০ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ প্রায় এক লাখ শ্রমজীবী মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে লবণ মিলমালিকেরা বলছেন, মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণের দাম ২৫০ টাকা হলেও তারা (মিলমালিক) লবণ কিনছেন ৩৬০ টাকা দরে। এ ক্ষেত্রে ১১০ টাকার মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগী ও দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস) টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ছয় লাখ ৭৪ হাজার ২৭৭ মেট্রিক টন, যা গত মৌসুমের এ সময়ের তুলনায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ বেশি উৎপাদন হয়েছে। গত বছর এ সময়ে উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৮ টন। তখন প্রতি মণ লবণ বেচাবিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকায়।

বিসিক সূত্র জানায়, এখন কক্সবাজার উপকূলে দৈনিক উৎপাদিত হচ্ছে ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। সাত দিন আগেও প্রতি মণ লবণ বেচাবিক্রি হয়েছিল ৪৮০-৫০০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে ১০ হাজার টন লবণের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি টাকা। কিন্তু কয়েক দিন ধরে লবণের দাম অর্ধেক নেমে আসে। তাতে চাষিরা হতাশ হচ্ছেন। লোকসানের আশঙ্কায় অনেকে লবণ উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তখন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

উপকূলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আকবর খান বলেন, চাষীদের টিকিয়ে রাখার জন্য লবণের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেছেন, লবণ আমদানি না করলে চাষীরা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারবেন।

কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ  ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ডিসেম্বরে লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে নতুন করে লবণ উৎপাদনে নামেন। এখন দাম কমে যাওয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে লবণের উৎপাদন বন্ধ রাখার চিন্তা-ভাবনা করছেন। লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে লবণ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেকের নেই।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, আমাদের চাষীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়