Apan Desh | আপন দেশ

গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা ছুঁয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২৫, ৭ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ২০:৩৭, ৭ মার্চ ২০২৩

গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা ছুঁয়েছে

ফাইল ছবি

সারাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির মাঝে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যম মাংসের কথাই বেশি আলোচনা হচ্ছে। এর মাঝে আছে ব্রয়লার মুরগী; যা স্মরণকালের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে। এবার তা রেকর্ড ৮০০ টাকা ছুঁয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) পবিত্র শবে বরাত। মুসলিমদের জন্য দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আর এই সুযোগে প্রায় প্রতি বছরই গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। মাংস সিন্ডিকেট শবে বরাতকে উপলক্ষ করে গরু ও খাসির মাংসের দাম বাড়িয়েছে। 

গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে অবৈধভাবে মাংস আমদানি, মাংস বিক্রির সঙ্গে সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে মাংসের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে রোজার আগে মাংসের দাম আরো বাড়তে পারে।

গত ২ সপ্তাহ ধরে তিন ধাপে ৫০ টাকা করে দাম বাড়িয়ে এক কেজি গরুর মাংস এখন ৮০০ টাকা। আর খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা। ফলে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে গরুর মাংস কেজিতে বাড়ল ১০০ টাকা এবং খাসির মাংসের দাম বাড়ল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

অথচ বাজারে গরুর কোনো সংকট দেখা দেয়নি, বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক সমস্যাও সৃষ্টি হয়নি বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। 

সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান, শবে বরাত এসেছে, মাংসের চাহিদা বেড়েছে- তাই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। 

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত ফেব্রব্রুয়ারির ১ তারিখেও ঢাকায় প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা। ১৫ ফেব্রুয়ারি বেড়ে হয়েছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি বেড়ে হয়েছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা।

যদিও সোমবার (৬ মার্চ) টিসিবির মূল্য তালিকায় প্রতিকেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা লেখা ছিল, তবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ দামে কোথাও গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এক কজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়।

এসবের মাঝে স্বাভাবিক একটি ঘটনা হয়েছে, দেশে গত কয়েক মাসে মাংসের দাম বাড়ার পর মাংসের বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গরুর খামারিরাও বলছেন মাংসের চাহিদা আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কমেছে।

সর্বশেষ কয়েকদিন ধরে দেশের নানা প্রান্তে গরুর মাংস নিয়ে মজার সব কাণ্ড হচ্ছে। বাগেরহাটে গরুর মাংস রঙ মিশিয়ে বিক্রি করার দায়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর একজনকে জরিমানা করেছে। আবার চট্টগ্রামে ২৫০ গ্রাম করে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। আমিষের বড় মাধ্যম মুরগী বিক্রি নিয়েও মজার সব বিষয় হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ একাধিক জায়গায় মুরগী টুকরো করে বিক্রি হতে দেখা যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় আট মিলিয়ন টন মাংসের চাহিদা। এর বিপরীতে প্রায় নয় মিলিয়ন টন মাংস উৎপাদন হচ্ছে। তারপর বিদেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি করা হচ্ছে। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় তিন মিলিয়ন টন মাংস আমদানি করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ভারত থেকে।

কল্যাণপুরের মাংস ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান বলেন, ‘শনিবার প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু মঙ্গলবার বিক্রি করছি ৮০০ টাকা কেজিতে। মূলত শবে বরাতের কারণে চাহিদা বেড়েছে, তাই দাম বেড়েছে।’

মোহাম্মদপুর সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইচ্ছা থাকলেও মাছ-মাংস সন্তানের মুখে দিতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে। একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো এখন সেই উপায় নেই। কমদামে ব্রয়লারও এখন কেনা যায় না। মাছের দামও বেড়েছে। আমরা এখন কী খাবো? এগুলো দেখার কেউ নেই। আমাদের নিয়ে সরকার ভাবে না। আমার জীবনে সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি। বাজারে এসে কোনোভাবেই পকেটের হিসাবের সঙ্গে মিলাতে পারছি না। 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, অহেতুক পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেশের জনগণের অর্থ লুটপাট করা সামাজিক সংক্রমণের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আছে, মন্ত্রণালয় আছে। মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে এবং বাজার অভিযান সম্পর্কে এসব প্রতিষ্ঠান কী করছে- তাদের কাছেই জানতে চান। বিষয়টি তাদের আওতার মধ্যে পড়ে। তবে আমরাও মাংসের বাজারে অভিযানে নামব।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ