Apan Desh | আপন দেশ

ইনসাফ কায়েম কমিটির (ইকাক) বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর প্রতারণার অভিযোগ!

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১১ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ০৫:০৫, ১১ এপ্রিল ২০২৩

ইনসাফ কায়েম কমিটির (ইকাক) বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর প্রতারণার অভিযোগ!

ছবি: আপন দেশ

দেশের বিদ্যমান আইন ভাংতে চায় জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি (ইকাক)। সংগঠনের আহ্বায়ক লেখক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সব আইন মানলে গণঅভ্যুত্থান হবে না। শেখ মুজিবুর রহমানও রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে গণঅভ্যুত্থান করেছেন। ওনার থেকেই আমরা শিখেছি।

সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির ‘দারিদ্র্য ও ইনসাফ’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়। তাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা স্তরের মানুষকে আনা হয়।

বেশ ক’দিন আগে থেকেই বিলি করা ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্রে লেখা ছিল- ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, উন্নয়ন নীতি এবং বাজেট কীভাবে ক্রমাগত বাংলাদেশের গরিব, হতদরিদ্র, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত জনগণের প্রতি অন্যায় ও বেইনসাফি করে যাচ্ছে সে সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনার জন্য একটি আলোচনাসভা ও সভা শেষে ইফতারের আয়োজন করেছি’। 

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ধর্মভীরু নারীদেরকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের কথা বলে নিয়ে গেলেনইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ইকাকের ইফতার অনুষ্ঠানে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর ধর্মানুভূতি নিয়ে প্রত্যারণার অভিযোগ করেছেন নারীরা। ইফতার অনুষ্ঠানে তাদেরকে বাসে বহন করে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা দিলেও কথা রাখেনি সংগঠনের প্রতিনিধিরা। 

বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে সুবাড্ডার বাসিন্দা আমির হোসেনর স্ত্রী মানসুরা বেগম। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাগর লইয়া আইছে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়াইব আর ইফতারী করাইব লগে পাসশ’ ট্যাহা দিব কইয়্যা। বায়তুল মোকাররমে নামাজ পরা আমাদের শখ। আমরা ত মক্কা মদিনা যাইতেরিনা হেইয়্যানে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পরুম। হেইহান থেইক্যা হাইট্যা আইছি। রোজা থাইক্যা যে হাটা হাটছি পাস ‘ ট্যার বেশি আইছি। কইল্যাম বায়তুল মোকারম না নামাজ পড়াইবেন, ইফতার করাইবেন তয় এইহানে ক্যান? এইয়্যা রোজার দিন মানুষে মানুষরে জানে কষ্ট দেয়?  

  

মানসুরা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কইছে লন বায়তুল মোকাররমে নামাজ পরবেন আর ইফতার খুইল্যা আইবেন। আমার স্বামীরে বলছি কি যামু? কয় যাও আল্লার ঘর, নামাজ পরতে যাবা যাও। আমি আবার আরবিও পরাই। তয় আইয়্যাা দেহি এই মজমা তাইলে এই গুনারভাগি অইতাম না?  

হাসিনা বেগম এসেছেন কেরানীগঞ্জের চুলকটিয়া থেকে। ইনসাফ কায়েম কমিটির প্রতিনিধিকে দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই আপা আমারে লইয়্যা আইল। কইল খালাই রোজা রইছেন? কইল্যাম হ্যা- হ্যায় কইল আয়েন আমার লগে। ইফতারি দিব আর পাসশ’ ট্যাহাও দিব’। হ্যাগোর লেগে আইল্যাম।’ কোন অনুষ্ঠান, কাদের অনুষ্ঠান তা জানেন না হাসিনা বেগম। তার সাথে আরও একশ’জন এই অনুষ্ঠানে এসেছেন বলে জানান এই বৃদ্ধা। 

গার্মেন্টস কর্মী ইবরাহিম থাকেন আব্দুল্লাহপুর। তার সহকর্মীরা তাকে সাথে এনেছেন। বিনা খরচায় যাতায়াতসহ হাতে দেয়া হবে নগদ টাকাও। এমন আশায় উঠেছেন বাসে। তার সাথে আরো শতখানেক কর্মী এই ‘জনগণের প্রতি অন্যায় ও বেইনসাফির’ বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

ইফতার অনুষ্ঠানে টঙ্গি থেকে এসেছিলেন শ্রী মনিরের শ্রীমতি দীপা রানী। কি অনুষ্ঠান বা অনুষ্ঠানের আয়োজক কারা তা জানেন না, তবে গাড়ীতে নিয়ে এসেছেন তারই সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা। 

মানসুরা-হাসিনাদের মতো শতশত নারী ছাড়াও দিনমজুর এবং অনেক গার্মেন্টসকর্মী দেখা যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চত্বরে। রাস্তায় রাখা হয়েছিল বেশ কিছু বাসও। আগতদের মাথায় ইংরেজিতে লেখা ‘এম কে’ নামের স্টিকারও।  

সভায় যা বললেন আলোচকরা: 

নতুন করে রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির আহ্বায়কও অনুষ্ঠানের সভাপতি কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সব আইন মানলে গণঅভ্যুত্থান হবে না। শেখ মুজিবুর রহমানও রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে গণঅভ্যুত্থান করেছেন। ওনার কাছ থেকেই আমরা শিখেছি। আমরা ৬০ দশকে দেখেছি। 

তিনি বলেন, যেখানে রাষ্ট্রই বেইনসাফি সেখানে পাঁচ বছর পর নির্বাচন করে দেশে ইনসাফ কায়েম হবে না। বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় এ ব্যবস্থায় ইনসাফ কায়েম হবে না। মাছ-মাংসের স্বাধীনতা চাই আজকে সাংবাদিকদের একথা লেখার স্বাধীনতা আছে? গণঅভ্যুত্থান হবেই- আমি বা শওকত নাও দেখে যেতে পারি।

আপনারা কি ইনসাফ চান কি চান না? সমস্বরে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজন বলে 'চাই, চই, চাই'।

( ১৬ মার্চে অনুষ্ঠিত নৈশভোজে অংশগ্রহণকারীদের খন্ডচিত্র-১ )

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, এই জালিম, বেআইনি, দুর্নীতিগ্রস্থ, খুনি, ভোট চোর সরকারের সাথে আমরা নাই।যারা শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন যাবে তারা দালাল, তাদেরকে আপনারা চিহ্নিত করবেন। এটা আমার দল গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের থেকে পরিষ্কার যে তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।

রেজা কিবরিয়া বলেন, অনেক জল্পনা-কল্পনা শুনা যায়। অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। আমার জীবনে অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। আমরা সুবিধা নিয়ে জনগণের সঙ্গে বেইমানী করব না-এটা গণ অধিকার পরিষদের দ্বারা হবে না।  

তিনি বলেন, কিছু কিছু পোষ্টারে লেখা দেখা যায় শেখ মুজিবের বাংলাদেশ, এটা শেখ মুজিবের নয় জনগণের দেশ, কোনো গোষ্টির দেশ নয়। ওই পোষ্টারগুলো তোলতে হবে। 

( ১৬ মার্চে অনুষ্ঠিত নৈশভোজে অংশগ্রহণকারীদের খন্ডচিত্র-২ )

সৈয়দ রেজাউল করিম চরমোনাই পীর সাহেবের দল ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ইনসাফ কায়েম কমিটির সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার করতে হলে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

পরে দেশ ও জাতির কল্যাণে মোনাজাত করা হয়। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আরোগ্য কামনায় দোয়া করা হয়। আগতদের হাতে দেয়া হয় বিরিয়ানীর প্যাকেট।

আরও পড়ুন <> বিএনপির নজরদারিতে অনেকে, শওকত মাহমুদ বহিষ্কার

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ( একাংশ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লেবারপার্টির নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইনসাফের সদস্য সচিব সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, দিগন্ত মিডিয়ার চেয়ারম্যান শিব্বির মাহমুদ, সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, ড. ফরহাত হোসেন খন্দকার, মাওলানা আশরাফুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

অনুষ্ঠানে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলা থেকে ইনসাফ কায়েম কমিটির ১৫ হাজার সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে সংগঠনের পক্ষে দাবি করা হয়। সংগঠনের এক উদ্যোক্তার মাধ্যমে গণমাধ্যমে অনুষ্ঠানের ভিডিও পাঠানো হয়। 

উল্লেখ্য, জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির (ইকাক) প্রতিষ্ঠাতা ফরহাদ মজহার। ২০১৩ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে আলোচনায় আগে গত ১৬ মার্চ। ওইদিন রাজধানী ঢাকার বনানীর শেরাটন হোটেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নৈশভোজ করায়। সেখানে সংগঠনের সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ ইনসাফ কায়েম কমিটির পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরেন। 

এর দু’দিন পরই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদসহ প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কৃত হন শওকত মাহমুদ। অবশ্য এর আগেই একাধিক অভিযোগ এনে দুই দফা কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়েছিল বিএনপির দফতর থেকে। খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে বহিষ্কারের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শওকত মামহমুদ নিজেও অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে মহল বিশেষ চক্রান্ত করেছেন। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ