‘প্রবাসে অপরাধের দায় সরকার নেবে না’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনভঙ্গ করে কেউ কোনো অপরাধে জড়ালে বাংলাদেশ সরকার তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সাবধান করে দেন তিনি।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) কাতারের দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা আনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে-এটি আর বরদাস্ত করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন- আপনি কাতারে আছেন, এদেশের প্রচলিত আইন আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করেন বা আইন ভঙ্গ করে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন সেই দায় দায়িত্ব কিন্তু আমরা নেব না, কেউ নেবে না। যে দেশে অবস্থান করেন সেই দেশের আইন যদি না মানেন তাহলে সেদেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে এবং এটি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। কোনো অপরাধির দায়িত্ব সরকার নেবে না।

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি কোন আপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেটি থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোনো চেষ্টা করবো না, কোনো ব্যবস্থাও নেব না, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণও অনেকে ঠিকভাবে নেন না।

তিনি বলেন, আমাদের নানা কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠানোর যে সুযোগ আমরা পাই সে সুযোগও হারিয়ে যায়। আরো ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগ থাকে সেটি তারা পায় না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ। 

প্রধানমন্ত্রী বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়টি আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।

এ সময় ধোকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সকলকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে শবে বরাত হওয়ায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও সমস্যার দিকে নজর দিতে বলেন।

তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা বাংলাদেশে অবস্থানরত আপনাদের আত্মীয়দের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় এনে যা যা পারে চাষ করতে বলুন কারণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশকে যে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশের ওপরে উন্নীত করেছে, স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করেছে।

সরকার প্রধান বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট লাগামহীন দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং নির্যাতনের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করে তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চলেছে।

আপন দেশ/আরএ