Apan Desh | আপন দেশ

আম রফতানি ২৮ দেশে, বাধা দূর করার তাগিদ 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২০, ৩ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ১১:২১, ৩ জুলাই ২০২৩

আম রফতানি ২৮ দেশে, বাধা দূর করার তাগিদ 

ফাইল ছবি

বিশ্বের ২৮টি দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের সুস্বাদু ফল আম। এসব আম পাঠায় ৬৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। রফতানির আম সাধারণত বিক্রি হয় বাংলাদেশি মালিকানাধীন সুপার শপগুলোতে। তবে চলতি বছর ইউরোপের মূলধারার চেইন শপেও আম পাঠানো হচ্ছে। 

এদিকে রফতানি বাড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে প্যাকিং ও সঙ্গনিরোধ সনদের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া শীর্ষ আম রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করার দাবি দেশের রফতানিকারকদের। 

বিশ্বে মোট আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০২১-২২ অর্থবছরে সাড়ে ২৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে। আর রফতানি হয়েছে এক হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন। 

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে এ দেশের ফলের রাজা আম। সবচেয়ে বেশি আম রফতানি হয় যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা জাতের আম রফতানি হচ্ছে।

জানা গেছে, এ অর্থবছরে আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে আম রফতানির প্রায় পুরোটাই আকাশপথে হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৭২০ মেট্রিক টনের বেশি আম রফতানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৪০০ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এ বছর এখন পর্যন্ত রফতানি প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। 

বাংলাদেশ আম রফতানিকারক দেশের শীর্ষ তালিকায় নেই। ফলবাজার নিয়ে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক পর্যালোচনা প্রতিবেদন বলছে, সবচেয়ে বেশি আম রফতানিকারক দেশের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান রয়েছে। ২০২২ সালে ভারত এক লাখ ৭৩ হাজার টনের মতো আম রফতানি করেছে। পাকিস্তানের রফতানির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৪১ হাজার টন। সবচেয়ে বেশি রফতানি করেছে মেক্সিকো—চার লাখ ৬৮ হাজার টন। থাইল্যান্ড রফতানি করেছে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার টন আম।

রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গ্রীষ্মকালীন ফলের প্রচুর চাহিদা আছে। তাই গত বছরের আম রফতানির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগে বিদেশি ক্রেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক ধরনের ব্যবধান ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় আম রফতানি বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ রফতানির জন্য ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। 

আম রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ ২০২২ সালে শুরু হয়ে ২০২৭ সালে শেষ হবে। ৪৭ কোটি আট লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় প্রকল্পটির কাজ চলছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, রফতানিকারকদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ম্যাংগোগ্রেডিং, ক্লিনিং ও কুলিং শেড নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। বিপণনে মার্কেট লিংকেজ স্থাপন ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘এতদিন বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের কাছে আম রফতানি সীমাবদ্ধ ছিল। এ বছর আমরা মূলধারার বাজারে রফতানি করতে সক্ষম হয়েছি। সুইজারল্যান্ডের একটি সুপার মার্কেট চেইনে আমরা ইতোমধ্যে ৪৫০ কেজি আম রফতানি করেছি।’

প্রকল্প পরিচালক জানান, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও পার্বত্য অঞ্চলের আট হাজার ৪০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর ৯৯০ জন আম চাষিকে নিয়ে কাজ চলছে।

দেশের আম বিদেশে রফতানির সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির উপদেষ্টা মো. মনজুরুল ইসলাম রফতানির ক্ষেত্রে দুটি বড় সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। আম বিদেশে পাঠানোর জন্য দরকারি উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বা ‘ফাইটো স্যানিটারি’ সনদ পেতে দীর্ঘসূত্রতা। আর উড়োজাহাজের উচ্চ হারে ভাড়া।

সঙ্গনিরোধ সনদ দেয় কৃষি অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা। আম বা এ ধরনের পণ্যের মান পরীক্ষা করে তা সঠিক বলে বিবেচিত হলেই এ সনদ পাওয়া যায়। মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘ফাইটো স্যানিটারি সার্টিফিকেট পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশ ভারত, পাকিস্তান বা থাইল্যান্ডের উড়োজাহাজ ভাড়ার চেয়ে আমাদের দেশ থেকে ভাড়া অনেক বেশি।’

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ইকবাল রউফ মামুন বলেন, রফতানির জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আম উৎপাদন ভালো উদ্যোগ। তবে দেশের বাজারে যে আম আসছে, তাতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ (রেসিডিউ) গ্রহণযোগ্য মাত্রার বেশি থাকছে কিনা, পাকানোর ব্যবহার করা উপাদানগুলোর সহনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা, তা দেখা দরকার।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে আম নিরাপদ ও রোগজীবাণুমুক্ত- এ নিশ্চয়তা দিতে হয়। কিন্তু আমরা এখনো সেই নিশ্চয়তা দিতে পারিনি। আমাদের প্রস্তুতি চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অচিরেই বিশ্ববাজারে দেশের আম রফতানির পথ সুগম হবে।’

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়