Apan Desh | আপন দেশ

কাঁঠালিয়ায় টেকসই বেড়িবাঁধ ও হাসপাতাল

‘প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই’

আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

‘প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই’

ছবি : আপন দেশ

স্বাধীনতার পর দেশে ১২টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা এসেছেন, তবে প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি হাতে। পরে আর মনে রাখেন না। নির্বাচন যায় নির্বাচন আসে। উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া জনপদ অবহেলিতই থাকে। আর প্রতিশ্রুতি নয়, এবার বাস্তায়ন চায় এ অঞ্চলের মানুষ। বর্তমান সংসদ সদস্যের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা উপজেলার প্রান্তিক কৃষক মো. আব্দুল মজিদ।

এলাকাবাসী জানান, বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, উপজেলা সদরে একটি হাসপাতালের দাবি দীর্ঘদিনের। ভোটের পর আর কথা রাখেনি নির্বাচিতরা। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর শ্রতিশ্রুতি ছিল বিষখালী নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। কাঁঠালিয়ার জনপদকে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে সুরক্ষা, উপজেলা সদরে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে করে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।

২০১৪ ও ২০১৮। এ নির্বাচনেও ছিল একই প্রতিশ্রুতি। অথচ তিনবারই এ আসনে নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। কিন্তু সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কোনও বাস্তায়ন হয়নি। ফলে উপজেলার বাসিন্দারা উন্নয়নের সুফল থেকে অনেকটাই বঞ্চিত।

এবারের নির্বাচনেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আশায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন কাঁঠালিয়াবাসী। এ নিয়ে টানা চারবার আওয়ামী লীগের জয় হলো। বিধায় বর্তমান সংসদ সদস্যের কাছে অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা একটু বেশিই। এর আগের দাবিগুলো পূরণ না হওয়ায় জনগণের আশার প্রতীপ নিভু নিভু; আর সম্ভাবনাও ফিকে। জেলা শহর থেকে দূরের ও দরিদ্রতম উপজেলা এটি। নদী ও কৃষিই জীবিকার উৎস। দুযোর্গের সঙ্গে লড়াই করেই টিকে আছে মানুষ।

উপজেলা পরিসংখ্যান দফতর সূত্রে জানা গেছে, কাঁঠালিয়া ১৫২ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারের নদী তীরবর্তী জনপদ। এখানে ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৭২ জন মানুষের বাস। এ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৯৪ জন। ইউনিয়নের সংখ্যা ছয়টি। উপজেলা পরিষদ বিষখালী নদী ঘেঁষা। নদী তীরে ভাঙন তীব্র। কিন্তু চার যুগেও নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। ফলে নদী তীরবর্তী গ্রামের মানুষদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন>> দিনাজপুরে বিআরটিসির বাসচাপায় নিহত ৪

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ইয়াস ও আম্ফানে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা কাঁঠালিয়া। বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর জলোচ্ছ্বাসে ফসল ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বেড়িবাঁধ না থাকায় সিডরে উপজেলায় ২১ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ঘূর্ণিঝড় আইলা, শেষে আম্ফান আঘাত হানে। বিষখালী নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ভেসে গেছে জেলেদের জাল, নৌকা। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ছোট-বড় পুকুর। নষ্ট হয়েছে কাঁচা, আধ-কাঁচা ঘর-বাড়ি ও ফসল। 

প্রতিদিন বিষখালী নদীর নোনা জলে আমুয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, কাঁঠালিয়া সদর, কচুয়াসহ প্রায় ১০টি গ্রামের ফসলি মাঠ প্লাবিত হচ্ছে। সিডরের সময় পানিতে বাড়িঘর, গবাধি পশু গরু-বাছুর ভেসে যায় এবং কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রতি বছর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

অপরদিকে উপজেলা সদরে কোন হাসপাতাল নেই। উপজেলা সদরসহ পাঁচ ইউনিয়নে দেড় লক্ষাধিক মানুষের বাস। তবে মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত তারা। একটিমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। আমুয়া ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে হলতা নদীর পাড়ে অবস্থিত। আওরাবুনিয়া ও চেঁচরী রামপুর ইউনিয়ন থেকে এ হাসপাতালের দূরত্ব ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও বেশি। ফলে একটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি পাঁচ ইউনিয়নের মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

উপজেলা সদরে শুধুমাত্র বহির্বিভাগের চিকিৎসা পদ্ধতির একটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। দরিদ্র এলাকা হওয়ায় এখানে ব্যক্তি মালিকানায় কোন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে ওঠেনি। সদরে দিলিপ চন্দ্র হাওলাদার নামের একজন এমবিবিএস ডাক্তার প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। তিনি অনেক সময় ব্যক্তিগত কাজে উপজেলার বাইরে গেলে উপজেলা সদর ডাক্তার শুন্য থাকে।

উপজেলার মহিষকান্দি গ্রামের মানসুরা বেগম জানান, হাসপাতাল দূরে থাকায় যেদিন ডাক্তার দেখাতে যাই, সেদিন আর রান্না বা কোন কাজ করা সম্ভব হয় না। ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।

আরও পড়ুন>> লাখপ্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন তিনি

কাঠালিয়ার সুজন সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম জানান, উপজেলা সীমানায় জালের মতো অসংখ্য খাল। বিধায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ দুর্গম। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দূরে হওয়ায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত; কষ্টসাধ্য ও ব্যয় বহুল। এছাড়া এলাকার গর্ভবতী মা, জখমি ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকেও বঞ্চিত। 

‘উপজেলা সদরের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এক একর ১৫ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত। এখানে এখনও এক একর জমি খালি রয়েছে। এখানেই একটি প্রশ্বস্ত আধুনিক মানের হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব।’

উপজেলা সদরের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন ডা. জুবায়দা আফসানা। জানান, আমরাও চাই সদরে একটি হাসপাতাল হোক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) বলেন, চিকিৎসা সেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। উপজেলা সদরে একটি আধুনিক হাসপাতাল, বিষখালী নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করবো।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়