Apan Desh | আপন দেশ

গাজীপুরের মেয়র হলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২৬ মে ২০২৩

আপডেট: ০৯:৫৬, ২৬ মে ২০২৩

গাজীপুরের মেয়র হলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন

ছবি : সংগৃহীত

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনেরই সাবেক মেয়র।

ভোটের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়েছেন জায়েদা।

সাধারণ গৃহিণী থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই আলোচনায় আসেন ৬১ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। ভোটের প্রচারে নিজেকে জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিনে ভোট গ্রহণ শেষে গভীর রাতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেছেন। মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। আজমত উল্লা পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ভোটের ফলাফলে তৃতীয় হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট। 

শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম যখন বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন জায়েদা খাতুনের ছেলে ও তার নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম। বিজয়ের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মায়েদের জয় হয়েছে গাজীপুরের নির্বাচনে। এ সময় তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে নৌকা জিতছে আর ব্যক্তি হেরেছে। আওয়ামী লীগ এবং নৌকার বিরুদ্ধেও কখনো যাননি এবং যাবেনও না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েই মূলত জাহাঙ্গীর তার মা জায়েদা খাতুনকে প্রার্থী করেন। অবশ্য তিনি নিজেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় তার প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন তিনি। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর। মায়ের পক্ষে দিনরাত প্রচার চালিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আজমত উল্লাও নির্বাচনী প্রচারে যা বলেছেন, এর প্রায় সবই ছিল জাহাঙ্গীরকেন্দ্রিক। ভোটে আজমত উল্লার হেরে যাওয়াকে জাহাঙ্গীরের জয় বলেই উল্লেখ করছেন তার অনুসারীরা।

ভোটে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ভোটার কেন্দ্রে গেছেন। তাদের বড় অংশের ভোট জায়েদা খাতুন পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে এমন আলোচনাও রয়েছে, আওয়ামী লীগবিরোধী বেশির ভাগ ভোটও তিনি পেয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলামের (হাতি প্রতীক) পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাত্র ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন। এতে বোঝা যায়, বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে যারা কেন্দ্রে গেছেন, তাদের ভোট জায়েদা খাতুনের পক্ষে গেছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৫০। ভোট পড়ার হার ৪৮ দশমিক ৭৫। মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের সব কটিতেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়।

নির্বাচনে অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকের জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ সাত হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকের গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ দুই হাজার ৪২৬ ভোট পেয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচনে এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে ভোটারের খরা দেখা গেছে। তবে গাজীপুর সিটির নির্বাচনে ব্যতিক্রমী চিত্রই দেখা যায়। সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর এজেন্ট না থাকলেও অনিয়মের তেমন কোনো অভিযোগ ছিল না।

উপনির্বাচনগুলোতে ভোটের গোপন কক্ষে ‘ডাকাতের’ উপস্থিতি দেখা গেছে। কিন্তু গাজীপুরের এই নির্বাচনে গোপন কক্ষে ভোটারের সহায়তার নামে কাউকে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা যায়নি। ভোটার, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বলেছেন, গাজীপুরের ভোট ছিল অনেকটাই উৎসবমুখর। কেউ কেউ এর সঙ্গে গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেরও তুলনা টানেন।

গাজীপুরের স্থানীয় ভোটার, রাজনীতিক ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারও পক্ষ না নেয়া, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর লোকজনের জবরদস্তির চেষ্টা না থাকার কারণেই ভোটের পরিবেশ অনেকটাই শান্তিপূর্ণ ছিল। ভোটাররাও অনেকটা নির্ভয়ে ভোট দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে যা কিছুটা ব্যতিক্রম।

অবশ্য শান্তিপূর্ণ ভোটেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কিছু অসুবিধা ও ত্রুটির বিষয়টি সামনে এনেছেন অনেক ভোটার। অনেকে বলেছেন, আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে ভোট দিতে দেরি ও ভোগান্তি হয়েছে। কারও কারও অনভ্যস্ততা ধীরগতির কারণ বলে ভোট গ্রহণে যুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়