Apan Desh | আপন দেশ

সোনার দর বাড়ে-কমে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১২:১৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

সোনার দর বাড়ে-কমে কেন?

ছবি: সংগৃহীত

দেশের বাজারে আবারও সোনার দাম কমানো হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) প্রতি ভরিতে এক হাজার ১৫৫ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এখন স্থানীয় মার্কেটে সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দর ১ লাখ ১১ হাজার ৪৬১ টাকা। এ নিয়ে টানা ৬ দফা কমানো হলো নিরাপদ আশ্রয় ধাতুটির মূল্য।

তবে একই দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্সের দর স্থির হয়েছে ২৩৪২ ডলারে। এ নিয়ে টানা ২১ দিন বিশ্ববাজারে আউন্সপ্রতি মূল্যবান ধাতুটির মূল্য থাকলো ২৩৩৬ ডলারের ওপরে। এখন প্রশ্ন হলো দেশে-বিদেশে সোনার দাম বাড়ে বা কমে কেন?

প্রথমত, যেকোনো ধরনের বৈশ্বিক সংকট সোনার দামে প্রভাব ফেলে। সেটা হতে পারে মন্দা, যুদ্ধ বা মহামারি। এখন মধ্যপ্রাচ্যে সংকট চলছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিন ও ইরানের সংঘাত বিদ্যমান। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিরাজমান। যে কারণে চকচকে ধাতুটির দর বাড়তি রয়েছে। বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মূল্য হ্রাস পাবে।

দ্বিতীয়ত, প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা মার্কিন ডলারের মান বাড়লে সোনার দাম কমে। আবার গ্রিনব্যাকের পতন ঘটলে বুলিয়ন বাজার চাঙা হয়। অর্থাৎ সোনার মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সুদের হার বাড়ালে ঊজ্জ্বল ধাতুটির দরপতন ঘটে। কারণ, ডলার ও মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড ঊর্ধ্বগামী হয়। আবার এই দুটি নিম্নমুখী হলে সোনার দর বেড়ে যায়।

তৃতীয়ত, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। ইউএস ডলারের ওপর আস্থা হারালে হলুদ ধাতুটির দিকে ঝুঁকে পড়ে মানুষ। বিশ্বের বৃহৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা কেনা বাড়ালে দাম বেড়ে যায়। বিপরীতে উল্টোটি ঘটে। অর্থাৎ দর হারায়।

চতুর্থত, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও সোনার দর বাড়ে। আবার উল্টোটাও হয়। সোনা মজুত রাখলেও মূল্য বৃদ্ধি পায়। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের কাছে সঞ্চিত রাখলে দাম ঊর্ধ্বগামী হয়। আর্থিক স্বচ্ছলতায় সোনার দর বাড়ে। তবে অর্থনৈতিক দুর্দশায় ধাতুটির মূল্য বৃদ্ধি পায়। মূল্যস্ফীতি চলাকালে এ দৃশ্য দেখা যায়।

যেকোনো সংকটে শেয়ার বাজার, বন্ড ও মুদ্রার মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শেয়ার বাজারে হঠাৎ ধস নামতে পারে। কিন্তু সোনার বেলায় তেমনটা নয়। তখন সোনা হয়ে ওঠে বিপদের বন্ধু। তাই একে বলা হয়, দুঃসময়ের আশ্রয়স্থল।

তেল ও গ্যাসের মতো সোনা শেষ হয়ে যায় না। নানা হাত ঘুরে তা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতেই থাকে। তাই সোনার স্থায়িত্ব আছে।

পঞ্চমত, সাধারণত বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় সেটির চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। সোনার আবেদন বেশি থাকলে দাম বাড়ে। তাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হন বিনিয়োগকারীরা। জোগান কম থাকলে দর বাড়ে। মূলত, বিশ্বের সোনার মজুত নির্দিষ্ট পরিমাণ। ফলে সবসময় ধাতুটির চাহিদা থাকে। কোনো কারণে জোগান বাড়লে দরপতন ঘটে।

ষষ্ঠত, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়ে। বিশ্ববাজারে কমলে দেশেও কমে। আবার টাকার মান কমলে গুরুত্বপূর্ণ ধাতুটির দর বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে মূল্য হ্রাস পায়। সাধারণত, দেশের বাজারে যে সোনা বিক্রি হয় সেটার বেশিরভাগই চোরাচালান হয়ে আসা বলে অভিযোগ করা হয়। এসব সরকার কোনও অর্থ পায় না।

সেক্ষেত্রে স্থানীয় মার্কেটে সোনার দাম আসলে কিভাবে নির্ধারণ হয় তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়