Apan Desh | আপন দেশ

পেঁয়াজের দাম কমেছে, মাছ-মাংস-মসলা-সবজিতে স্বস্তি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২৬ মে ২০২৩

আপডেট: ১৫:৫৬, ২৬ মে ২০২৩

পেঁয়াজের দাম কমেছে, মাছ-মাংস-মসলা-সবজিতে স্বস্তি নেই

ফাইল ছবি

চলমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। আমদানির খবরে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। মাছ-মাংস-মশলার পাশাপাশি স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। একমাসের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় ওঠা পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভালো হলেও দাম বেশি। নিত্যপণ্যের দাম না কমায় দারুণ অস্বস্তিতে সাধারণ ক্রেতারা। 

শুক্রবার (২৬ মে) সকালে সরেজমিন রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, কয়েকমাসে বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপ সব কিছুতে ছড়িয়ে পড়ছে। অবস্থা এমন যে, মাছ-মাংস ছুঁয়ে দেখতেও ভয় পাচ্ছেন নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা। বকরির মাংস ১০০০ টাকা।

এদিকে, টানা কয়েক সপ্তাহ থেকে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২৩০-২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা। সেই উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছগুলোর দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত।

চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেত।

অন্যদিকে মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা এবং চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি।

মসলার বাজারে আদার দামে অস্থিরতা কাটেনি। এক কেজি আদা কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশি; যা গত বছর এ সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণ বেশি। ঈদুল ফিতরের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে আমদানি করা চীনা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।

বাজারে গ্রীষ্ম মৌসুমের সবজির সরবরাহ ভালো হলেও দাম চড়া। প্রতিকেজি বেগুন, করলা, বরবটি, ঝিঙা, পটল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা দাগে ৬০ টাকার নিচে এক কেজি সবজি মিলছে না।

মালিবাগ বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুল আলমের সঙ্গে।  তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো হিসাব কষে চলা মানুষ আর ভালো মাছ বা মাংস খেতে পারছে না। কম দামে চাষের মাছ, ব্রয়লারও এখন কিনতে হচ্ছে বহু কষ্টে। সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। তাই সন্তানদের ভালো খাবার খাওয়াতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে অন্য খরচে টান পড়ছে। সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি।

রামপুরা বাজারে রিকশাচালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো, সেই উপায় নেই। এগুলো দেখার কেউ নেই। গরিবকে নিয়ে কেউ ভাবে না। দিনে যে কয় টাকা আয় করি, তার মধ্যে যদি ২৫০ টাকার মাছ কিনি, অন্য খরচ কী দিয়ে হবে?’

মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা গার্মেন্ট কর্মী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে বলতে গেলে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। যেটারই দাম করা হচ্ছে তার দামই ৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি। প্রতিটি সবজির এতো দাম হলে আমরা সাধারণ মানুষ কিনতে পারবে না। আজ প্রায় এক মাস ধরে প্রতিটি সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। আগে যদি এক কেজি সবজি কিনতাম এখন বাড়তি দামের জন্য আধা কেজি করে কিনি। কিন্তু বাজারে আসলে হিসেবে মেলে না। 

মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আহমদ আলী বলেন, কিছুদিন আগে করলা, বরবটি, ঢেঁড়স, বরবটি ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সেই তুলনায় এগুলোর দাম কিছুটা কমেছে। মূলত শীতের সময় সবজির দাম কম থাকে, অন্য সময় একটু বেশি থাকে। তবে এবার একটু বেশি বাড়তি দাম যাচ্ছে সবজির।

গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে সবজি বিক্রেতা আকরাম হোসেন বলেন, আমরা যে বেশি দামে সবজি বিক্রি করছি এমনটি নয়।  পাইকারি বাজারেই সব ধরনের সবজির বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এই কারওয়ান বাজারে এক সবজি তিন ধরনের পাওয়া যায় একটা ভালো মানেরটা, এরপর মাঝারি মান আর সবশেষে তুলনামূলক খারাপ মান। যারা যেমন মানের জিনিস পাল্লা ধরে কিনে আনে তারা তেমন দামে বিক্রি করেন। 

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা হায়াত আলী বলছেন, সবজির দাম বাড়ার কারণে বিক্রিও কমেছে। আগে যেখানে একজন ক্রেতা একটা সবজি এক কেজি নিত, এখন সেখানে আধা কেজি নিচ্ছে।

রামপুরার খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ভালোমানের পেঁয়াজ এখন প্রতি মণ কিনতে হচ্ছে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ টাকায়। কেজি পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৭৫ থেকে সাড়ে ৭৭ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে গাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ। তাই ভালোমানের পেঁয়াজ ৮৫ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। তবে সাধারণ মানের পেঁয়াজ কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। চায়না আদার আমদানি বন্ধ থাকায় সরবরাহ নেই। কেরালা জাতের আদা ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।’ 

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই মুরগির দাম কমতির দিকে। এখন খুচরায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রকারভেদে কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মুরগির চহিদা কমার কারণে পাইকারিতে মুরগির দর কম। ফলে খুচরা পর্যায়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।’

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়