Apan Desh | আপন দেশ

চিনি ও লবণ, কখনো বন্ধু কখনো শত্রু

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২৪ মে ২০২৩

আপডেট: ১৪:২১, ২৪ মে ২০২৩

চিনি ও লবণ, কখনো বন্ধু কখনো শত্রু

ফাইল ছবি

চিনি ও লবণ দুটি পণ্যই আমাদের নিত্য বাবহার্য। দুটিরই উপকারিতা আছে। কিন্তু ব্যবহার না জানলে বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অপকারিতাও কম নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে দুটিই আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। মসলাদার নোনতা খাবার অথবা খাবারের পরে মিষ্টান্ন পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। তবে হৃদপিণ্ডের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়ে অনেকেই অসচেতন।

কয়েক দশক আগেই গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি চিনি ও লবণ সমৃদ্ধ খাবার হৃদপিণ্ডের জন্য ঝুঁকিকর। আর নানান রকম হৃদরোগের অন্যতম কারণ। দুটির মধ্যে যদি একটিকে কমাতে বলা হয় তাহলে কোনটা আগে কমাবেন তা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

লবণ : প্যাকেটের ভাজাভুজি, রাস্তার খাবারে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। কারণ, এতে ব্যাপক পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। ‘লাইফ সায়েন্স’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, অল্প এবং সীমিত পরিমাণে লবণ শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু পরিমাণে বেশি হয়ে গেলেই হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে। এতে কিডনিরও ক্ষতি হয়।

নয়া দিল্লির ওখলা’তে অবস্থিত ‘ফোর্টিস এস্কোর্ট হসপিটাল’য়ের ‘কসালটেন্ট নিন-ইনভেসিভ কার্ডিওলজিস্ট’ ডা. মহিত ট্যান্ডন জানান, একজন প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য দৈনিক এক হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম প্রয়োজন। ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথোরিটি অব ইন্ডিয়া’ অনুসারে দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা পাঁচ গ্রামের কম হওয়া উচিত। তা ছাড়া লবণই সোডিয়ামের এক মাত্র উৎস নয়। পাউরুটি, পিৎজ্জা, স্যান্ডউইচ, হিমায়িত মাংস, স্যুপ, মজাদার নাস্তা, পোল্ট্রি, পনির, অম্লেট ইত্যাদি নানান রকম খাবারে প্রচুর সোডিয়াম থাকে।

কিডনি সোডিয়াম বিপাক করে। অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ দেহে পানি জমাট বাঁধায় ও ওজন বাড়ে। এটা রক্তের প্রবাহ বাড়ায়, ফলে হৃদপিণ্ডের কাজ বাড়ে। যে কারণে রক্তচাপ বাড়ে এবং ধমনীতে চাপ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি ‘হাইপারটেনশন’ বা উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

ডা. টেন্ডন বলেন, ‘এ কারণে পায়ে ও গোড়ালিতে ফোলাভাব দেখা দেয়। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার কম সোডিয়াম গ্রহণ নিম্ন রক্তচাপের জন্য দায়ী।’

চিনি : বেশির ভাগ খাবারই চিনি ছাড়া অসম্পূর্ণ। অল্প পরিমাণে চিনি তেমন কোনো ক্ষতি করে না- এমনই একটা ধারণা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘কুইন্সল্যান্ড হেলথ' জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, অল্প চিনিও ক্ষতি করে। চিনির পরিমাণ বাড়লে ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়ে।

জামা ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. ট্যান্ডন বলেন, যারা বাড়তি শর্করা থেকে ১৭ থেকে ২১ শতাংশ ক্যালরি গ্রহণ করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই যত বেশি শর্করা গ্রহণ করা হবে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে।

শর্করা সরাসরি হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে না। তবে পরোক্ষভাবে অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে ক্ষতিসাধন করে বলে জানান এই চিকিৎসক।

অতিরিক্ত শর্করা লিভার বা যকৃতের মাধ্যমে বিপাকিত হয়ে চর্বিতে রূপান্তরিত হয় যা পরে ‘ফ্যাটি লিভার’ ও স্থূলতা সৃষ্টি করে। যা থেকে হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বাড়তি শর্করা ধরনের খাবার খাওয়া দ্রুত ওজন বাড়ায়। বাড়তি শর্করা মানে সরল কার্বোহাইড্রেইট যা সহজেই পরিপাক হয়। মিষ্টি পানীয় যেমন- সোডা, কোমল পানীয় শক্ত খাবারের মতো পেট ভরায় না। তাই প্রোটিন বা চর্বিবহুল অথবা আঁশ সমৃদ্ধ খাবারের মতো পরিতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব না। অতিরিক্ত বাড়তি শর্করা দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এবং রক্তচাপ বাড়ায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটির মধ্যে কোনো একটি বাদ দিতে হলে অবশ্যই চিনি বাদ দেয়া উচিত। তাদের ভাষায়, লবণ যেমন হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় তেমনি চিনিও একই কাজ করে। শুধু তাই নয়, চিনি রক্তচাপ, অবসাদ, ডায়াবেটিসের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি বেশি পরিমাণে চিনি খেলে ধীরে ধীরে বুদ্ধির পরিমাণও কমে যায়।

আপন দেশ/আরএ

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়