Apan Desh | আপন দেশ

ওয়ান ইলেভেনের ১৭ বছর

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ১১ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৯:০২, ১১ জানুয়ারি ২০২৪

ওয়ান ইলেভেনের ১৭ বছর

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১১ জানুয়ারি। ১৬ বছর আগের এই দিনে আবির্ভাব ঘটেছিল কথিত ওয়ান ইলেভেন-এর। সংসদ নির্বাচন ঘিরে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত হয় সেনা নিয়ন্ত্রিত ‘অন্তর্বতীকালীন সরকার’। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীতে এটিকে ‘ওয়ান ইলেভেন’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।

দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। দিনভরই চারদিকে ছিল নানা গুজব, গুঞ্জন। সার্বিক পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এই অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফর উল্যাহ এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল যোগ দেন কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে।

কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার ডগলাস ফসকেট, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইনোওয়ে মাসাইয়েকি, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত ড. স্টিফান ফ্রোইন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রেনাটা ডেজালিয়েন।

দীর্ঘ বৈঠক শেষে অনেকটা হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি। কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসা থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি চলে যান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির সুধাসদনের বাসায়।

আওয়ামী লীগ নেতারা বের হওয়ার আধাঘণ্টা। কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন- বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। বৈঠক শেষে তারাও মুখ খোলেননি। সোজা চলে যান গুলশানের হাওয়া ভবনে। সেখানে তারা বৈঠক করেন দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এর আগে, দুপুরে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সঙ্গে তার বারিধারার বাসায় বৈঠক করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী।

কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রধান দু'টি দলের বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দুপুরে বৈঠক করেন আইনশৃংখলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে। এতে কমিটির সদস্যরা ছাড়াও সব আইনশৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পরপরই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন বঙ্গভবনে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অন্যদিকে বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়। দু'একজন ছাড়া উপদেষ্টাদের প্রায় সবাই বঙ্গভবনে গিয়ে বৈঠক বাতিলের খবরে ফিরে আসেন।

বঙ্গভবনের বৈঠক শেষে বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ বাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাব, বিডিআরসহ সব আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সেনাসদরে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ।

রাত সাড়ে আটটায় বঙ্গভবনে পুনরায় ডাকা হয় উপদেষ্টাদের। কোনো বৈঠক ছাড়াই উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে উপদেষ্টাদের অবহিত করা হয়। এ সময় উপদেষ্টাদের সবাইকে পদত্যাগের অনুরোধ জানানো হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে উপদেষ্টারাও পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ডক্টর ফকরুদ্দিন আহমদকে। তিনি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন।

এসব নাটকীয় ঘটনা ও টানটান উত্তেজনা-উদ্বেগের মধ্যেই সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে বলা হয় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন এবং বিপদের সম্মুখীন হওয়ায় রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন’। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জরুরি অবস্থা কার্যকর হবে। একইসঙ্গে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সকল মহানগর এবং জেলা শহরে কারফিউ বলবৎ থাকার ঘোষণাও দেয়া হয়।

আরও পড়ুন>> আ.লীগ এখন নতুন খেলায় নেমেছে: কাদের

এরপর নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাত সাড়ে এগারোটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ভাষণে তিনি বলেন, একইসঙ্গে দু'টি দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। এই অবস্থায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথকে সুগম করতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাতে সরকারের তথ্য অধিদফতর থেকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে রাজনৈতিক সংবাদ ও সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় টিভি চ্যানেলের খবর ও টকশো।

ওয়ান ইলেভেনে সব দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। সাজা হয়, পরে মুক্তিও মেলে। এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সে থেকে টানা সরকারের আছে দলটি। 

আপন দেশ/এবি/এসএমএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ:

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিতে বলেছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জে র‍্যাব হেফাজতে নারী মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী, দুইজনের মৃত্যু সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ শুরু দেশের পাঁচ অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের অর্ধদিবস অবরোধ চলছে ইরানি প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যু, জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইরানের মন্ত্রিসভা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মারা গেছেন ভারতে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ শুরু