Apan Desh | আপন দেশ

দিনের তাপমাত্রা বেড়ে শীতের অনুভূতি কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১২:১২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

দিনের তাপমাত্রা বেড়ে শীতের অনুভূতি কমেছে

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে কয়েক দিন ধরে। ঘন কুয়াশার কারণে সারা দিনেও দেখা মিলছিল না সূর্যের। তবে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দেশের অনেক অঞ্চলেই কমবেশি কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে, সামান্য কমেছে শীতের অনুভূতি। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে গরম কাপড়ের বেচাকেনা।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) আরও কিছুটা বেশি সময় ধরে সূর্যের উত্তাপ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে চলমান শীত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে আগামী কিছুদিন শীতের অনুভূতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয় দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক বিপ্লব দাশ বলেন, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এখানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার শঙ্কা আছে। তাপমাত্রা কম থাকলেও মৌলভীবাজারের সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলেছে। ঝলমলে রোদ উষ্ণতা ছড়িয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ‘দেশের অনেক অঞ্চলে সোমবার সূর্য ওঠায় দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।ফলে দিনের বেলা শীতের অনুভূতি কিছুটা কমেছে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার পরিস্থিতির আরও কিছুটা উন্নতি হতে পারে। দেশের অনেক অঞ্চলে, বিশেষ করে সকাল ১১টা-১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলতে পারে। আগামী কয়েক দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে শীতের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে।’

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ঢাকায় রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক এক ডিগ্রি, সোমবার ছিল ২১ দশমিক চার ডিগ্রি। অন্যদিকে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি, সোমবার ছিল ১৪ দশমিক আট ডিগ্রি। অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক আট ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে তিন ডিগ্রিরও বেশি। ফলে শরীরে শীতের অনুভূতি কিছুটা হলেও কমেছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।এতে তখন রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে লম্বা সময়ের জন্য সূর্যের দেখা পাওয়া যেতে পারে। বাড়বে দিনের তাপমাত্রা। এ কারণে শীত তীব্র হওয়ার আশঙ্কা কম।

সোমবার মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, বরিশাল ও ভোলা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (আট থেকে ১০ ডিগ্রি) বয়ে গেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বরিশালে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে নয় দশমিক পাঁচ, গোপালগঞ্জে নয় দশমিক আট এবং মাদারীপুর ও ভোলায় ১০ ডিগ্রি। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি পরিস্থিতি ছিল আরও কয়েকটি অঞ্চলে। সামগ্রিকভাবে সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নয় থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সামান্য বাড়তে পারে রাতের তাপমাত্রা। আগামীকাল বুধবার রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন <> শীত নিয়ে সুসংবাদ নেই

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণি বিতানসহ বিভিন্ন অলি-গলিতে গরম পোশাক বিক্রির ধুম পড়েছে। বিশেষ করে জ্যাকেট, সোয়েটার, ক্যাপ, মোজাসহ শীতের হরেক রকম পোশাক বেচাকেনায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কম দামে গরম পোশাক কিনতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এসব দোকান থেকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে নানা ধরনের শীতের পোশাক কিনছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

অন্যদিকে গত ৩৩ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু আট বছর ধরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা বিবেচনায় নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা নয় দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এ বছরও ঢাকায় ডিসেম্বরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে তা প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। ফলে তীব্র শীতে রাজধানীর জীবনযাত্রা রীতিমতো স্থবির হয়ে পড়েছে। যদিও ঢাকায় গত আট বছরে একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ বছর শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে তীব্র শীতের অনুভূতিই পাচ্ছেন নগরবাসী।

আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ও জলবায়ু গবেষক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, বাংলাদেশে শীত নামে মূলত হিমালয় পেরিয়ে পঞ্চগড় দিয়ে শীতল বাতাস আসার কারণে। একইভাবে সিলেটে মেঘালয় থেকে আসা শীতল বাতাস প্রবেশ করে তাপমাত্রা কমায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের পর থেকে জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কুয়াশা বেড়ে যেতে দেখছি। দক্ষিণ এশিয়ার বড় অংশজুড়ে মাসের বেশির ভাগ সময় ওই কুয়াশা দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে না গেলেও তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে।

সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, কুয়াশার কারণে জানুয়ারিতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকাজুড়ে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে, যা একসময় শুধু উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে বেশি দেখা যেত। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, শীতকালে কোন এলাকায় শীত বেশি, তা এখন আর শৈত্যপ্রবাহ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কারণ, দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে এলে তা শৈত্যপ্রবাহের চেয়েও বেশি শীতের অনুভূতি হয়। এখন শৈত্যপ্রবাহ দেশের চার-পাঁচটি জেলায় থাকলেও তীব্র শীতের অনুভূতি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় থাকছে। ফলে এ ধরনের শীত মোকাবিলায় আমাদের কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়