Apan Desh | আপন দেশ

সীমান্তে গোলাগুলি কমলেও আতঙ্ক কাটছে না

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সীমান্তে গোলাগুলি কমলেও আতঙ্ক কাটছে না

ফাইল ছবি

মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ক্রমেই ভীতিকর হয়ে উঠছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরা দিনের বেলা ঘরে থাকলেও রাত কাটাচ্ছেন দূরে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে।

সীমান্তে এখন গোলাগুলির মাত্রা কমে আসলেও মানুষের মাঝে আতঙ্ক রয়ে গেছে। ভয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলে। সীমান্তবর্তী স্কুলগুলোয় অনুপস্থিত থাকছে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা বলছেন, গোলাগুলির ভয়ে তারা বিদ্যালয়ে আসছে না। 

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের হোয়াইক্ষ্যং সীমান্তের ওপারে নতুন করে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। সীমান্তের এসব এলাকায় লাখের কাছাকাছি বাসিন্দা রয়েছেন।

এদিকে বুধবার আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার মুখে নতুন করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সামরিক কমান্ডারসহ ৬৪ জন টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ৩২৮ জন মিয়ানমারের নাগরিক। এর মধ্যে বিজিপি সদস্যের পাশাপাশি সে দেশের সেনা কর্মকর্তা, শুল্ক কর্মকর্তাও রয়েছেন।

অপরদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সীমান্তে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা তৎপর রয়েছেন। বুধবার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

শুক্রবার রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। ইতোমধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার দিবাগত রাত তিনটা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের উপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিকামী বিদ্রোহীদের সংঘাতে ব্যবহৃত মর্টার শেলের আঘাতে হতাহতের ঘটনায় লোকজন ঘরবাড়ি ছাড়ছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারপাড়া, কোনাপাড়া, মাঝেরপাড়া, ঘুমধুমপাড়া, জলপাইতলীর কয়েক শতাধিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রসহ দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের খোলা উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০টি পরিবারের ২৪৩ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছে।

এ ছাড়া দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা আত্ময়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। তবে ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কেউ যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিতে অস্থায়ী দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াইশ মানুষ অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে দেড়শ পরিবার চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে সীমান্তবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে তেমন গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে জানতে পেরেছি-আরাকান বিদ্রোহীরা সীমান্ত রক্ষী বিজিপির তুমব্রু, ঘুমধুম, ডেকুবুনিয়া ক্যাম্প দখল করেছে। সেখানে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন শঙ্কায় সীমান্তবাসী নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।

বুধবার সীমান্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে আমরা ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে বিজিবি সদস্যদের তিনি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। 

আরও পড়ুন <> সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রায় আজ

একইদিন সকালে কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এবং তৎসংলগ্ন বিওপি পরিদর্শন করেন বিজিবি মহাপরিচালক। সীমান্তে দায়িত্বরত সব পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের তিনি খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি সদা তৎপর থাকার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বিজিবি সদস্যের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে বিজিবি সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার, রামু সেক্টর কমান্ডার ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও ৬৩ বিজিপি সদস্যের আশ্রয় : মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বিজিপির আরও ৬৩ সদস্য বাংলাদেশে এসেছেন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উলুবনিয়ার সীমান্ত দিয়ে তারা পালিয়ে আসেন। বিজিবির সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, পালিয়ে আসা বিজিপির সদস্যদের অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত বিজিপি, সেনা ও সাধারণ নাগরিকসহ ৩২৭ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সমুদ্রপথে সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফিরিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার : বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের দেশটি নৌবাহিনীর জাহাজে ফিরিয়ে নিতে চায়। এ ব্যাপারে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

বুধবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় মিয়ানমারের দেয়া প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আলোচনা হয়েছে। 

এদিন মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের আলোচনাতেও বিষয়টি এসেছে। 

আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন অনলাইনের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।

আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের ৩২৮ জন নাগরিককে কীভাবে ফিরিয়ে দেয়া যাবে, সেটি সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়