Apan Desh | আপন দেশ

এফআর টাওয়ারে আগুন: পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৮ মার্চ ২০২৪

এফআর টাওয়ারে আগুন: পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

ফাইল ছবি

রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ার। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এ টাওয়ারে আগুন লাগে। ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। আগুনের ঘটনায় আহত হন ৭১ জন। 

ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল ভবনগুলোর অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা। অগ্নিকাণ্ডের জেরে পৃথক তিনটি মামলা হয়। অবহেলাজনিত মৃত্যু ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগে একটি এবং অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ ও নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষতিসাধনের অভিযোগে দুটি মামলা করে দুদক। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিচার শেষ হয়নি। দুদকের দুই মামলার বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্য গ্রহণে তেমন অগ্রগতি নেই।

আইনজ্ঞদের মতে, অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জবাবদিহির আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে বড় অগ্নিকাণ্ড ঠেকানো কঠিন হবে।

ঘটনার প্রায় তিন বছর নয় মাস পর ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর পুলিশের মামলাটি তদন্ত শেষে আট জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সমীর চন্দ্র সূত্রধর। তবে রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মামলাটির দিন ধার্য। ওই দিন চার্জশিটটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তবে আদালত চার্জশিটটি গ্রহণ না করে মামলাটি পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

ওই দিন আদালত আদেশে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন মানুষ মৃত্যুবরণসহ অসংখ্য মানুষ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। তদন্ত কর্মকর্তা এজাহারনামীয় গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন। মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হওয়ায় পিবিআইয়ের একজন দক্ষ অফিসার দ্বারা মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

এরপর পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে। গত ২২ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত করে আদালতে একই আসামিদের অভিযুক্ত করে ও লিয়াকত আলী খান মুকুলকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রফিকুল ইসলাম।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত পিবিআইয়ের দেয়া আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, এফআর টাওয়ার ভবনের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকা এস এম এইচ আই ফারুক, তাজভিরুল ইসলাম, সেলিম উল্লাহ, এ এ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, ওয়ারদা ইকবাল, কাজী মাহমুদুল নবী ও রফিকুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে ফারুক জমির মূল মালিক। তাজভীরুল ইসলাম ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতি। অন্য ছয় জন ভবন পরিচালনা কমিটির সদস্য। 

ওই সময় আসামিদের মধ্যে মনিরুজ্জামান, মাহমুদুল নবী, সেলিম উল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ও ওয়ারদা ইকবাল পলাতক ছিলেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে আসামিরা বিভিন্ন সময় আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। বর্তমানে সব আসামি জামিনে আছেন। 

সর্বশেষ গত ১২ মার্চ মামলার তারিখ ধার্য ছিলো। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত নথিটি সিএমএম বরাবর পাঠানোর আদেশ দেন। সিএমএম মামলাটি পরবর্তী বিচারের জন্য আদেশ দিবেন। মামলাটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জানান, মামলাটির দুই দফা তদন্ত শেষে চার্জশিট আদালতে চলে এসেছে। মামলা বিচারের জন্যও প্রস্তুত হয়ে গেছে। চার্জগঠন করে বিচার শুরু হবে। এরপর সাক্ষী হাজির করে যতদ্রুত সম্ভব মামলার বিচারকাজ করবো।

আরও পড়ুন <> নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু সাঈদ বলেন, মামলার চার্জশিটে উল্লেখ আছে ১৫ তলা ভবনের রাজউক কর্তৃক যে অনুমোদন দেয়া আছে তা সঠিক আছে। এটি পরিষ্কার উল্লেখ আছে। ল্যান্ডওনার ১৫ থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত রূপায়ন গ্রুপকে করতে দিয়ে দেয়। রূপায়ন গ্রুপ রাজউক থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত যে পারমিশন আনছে এটিও ঠিক আছে। সেটিও চার্জশিটে উল্লেখ আছে। এখানে যে ল্যান্ডওনার তার তো কোনো অপরাধ নেই। তিনি তো সঠিকভাবে স্যাংশন এনে বা পারমিশন এনে করেছে। পরবর্তীতে তিনতলা এক্সটেনশন করার জন্য রূপায়নকে দেয়া হয়। এখানে জমির মালিকের দায় নেই। আর তিনি তো মারা গেছেন। আর রূপায়ন গ্রুপ তো সঠিকভাবে পারমিশন এনে করেছে। পরবর্তীতে তা হ্যান্ডওভার করেছে। হ্যান্ডওভারের পর তার তো আর কোনো দায় থাকে না। পরবর্তীতে কী করতে হবে এটি ডেভেলপারের আর থাকে না। এ কারণে মুকুল সাহেবকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে। আর বাকিদের মধ্যে ওয়ারদা নামে একজন মহিলা আছেন। কমিটির একজন সদস্য হিসেবে তার নাম আছে এটি তিনি জানেনও না। কোনো মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাইনি। আর ওয়ারদা দেশে থাকেন না।

তিনি বলেন, এই মামলা পুনরায় তদন্ত হওয়া উচিত। কেন? যদি এটিকে স্ট্যান্ড করতে হয় তাহলে রাউজকের লোককে মামলায় ইনভলপ করতে হবে। এটি হলো ফাইনাল কথা। রাজউকের অনেক লোক, উচ্চপদস্থ যারা অনুমোদন দিয়েছে তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এটি সঠিকভাবে তদন্তই হয়নি। তদন্তে আগেও যা দিছে পরেও তাই দিছে। তেমন কোনো রদবদল হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, অভিযুক্তরা ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী। বিচার হলেও তা হয় নামকাওয়াস্তে। নানা কৌশলে মামলার বিচার বিলম্বিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গরিবদের নিয়ন্ত্রণ করেন আইন; আর আইনকে নিয়ন্ত্রণ করে ধনিক শ্রেণি। এটিই বাস্তবচিত্র।’

আগুনের ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত ৩০ মার্চ বাদী হয়ে মামলা করেন। 

এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মামলাজনিত কারণে ভবনটির বিষয়ে রাজউকও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রাজউকের বনানী এলাকার অথরাইজড অফিসার ইমরুল হাসান জানান, ভবনটির কাঠামোগত অবস্থাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। এ জন্য এটি ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে কিনা, তাও বলা যাচ্ছে না। সবকিছুই নির্ভর করছে মামলার সুরাহার ওপর। 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়