Apan Desh | আপন দেশ

জেলেদের দাবি আইন সংশোধন ও সময় কমিয়ে আনা

সাগরের মাছ আজ থেকে ৬৫ দিন ধরা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ১৯ মে ২০২৩

আপডেট: ১২:০০, ১৯ মে ২০২৩

সাগরের মাছ আজ থেকে ৬৫ দিন ধরা যাবে না

ফাইল ছবি

সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে শুক্রবার (১৯ মে) মধ্যরাত থেকে সমুদ্রে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে। 

এদিকে সরেজমিন দেখা যায়, অনিচ্ছাসত্ত্বেও জাল উঠিয়ে সমুদ্র থেকে তীরে ফিরতে শুরু করেছেন জেলেরা। কেউ ঘাটে এসে নোঙর করেছেন আবার কেউ তীরে ফেরার জন্য সমুদ্র থেকে রওনা হয়েছেন। তবে বৈরী আবহাওয়া আর একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় নাকাল সাগর উপকূলের জেলেরা। তাই তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। নিষেধাজ্ঞার আগে মাছ শিকার করে কিছু পুঁজি করে রাখবেন জেলেরা–এবার তা-ও পারেনি বৈরী আবহাওয়ার কারণে। 

উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ আশেপাশের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইতোমধ্যে অধিকাংশ ট্রলার বন্দরে এসে পৌঁছেছে। 

জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৎস্যভিত্তিক অর্থনীতির সুরক্ষায় এসব জেলেদের পেশা পরিবর্তন রোধে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি তাদের। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন রোধেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

এই আইনের সংশোধন আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন উপকূলের হাজার হাজার জেলে। ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনিতে ভালো নেই। এর মধ্যে টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাতে হবে তাদের। সামনে বর্ষায় ইলিশের ভরা মৌসুম। ওই সময়টায়ই থাকবে নিষেধাজ্ঞা। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে আনার দাবি তাদের।

মৎস বিভাগ জানায়, নিষেধাজ্ঞার সময় যেন অবৈধভাবে কেউ মাছ শিকার করতে না পারে, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মৎস্য বিভাগ যৌথভাবে কাজ করবে। কর্মহীন জেলেদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।

গভীর সমুদ্র থেকে আলীপুর মৎস্য বন্দরে ফেরা এফবি জান্নাত ট্রলারের মাঝি মো. কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার সময়ে সাত-আট দিন ছিলাম তীরে তার পরে সাগরে ছিলাম চার দিন আবার চলে আসছি। ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সরকার আমাদের ৮৬ কেজি চাল দেয় কিন্তু এই বাজারে শুধু চাল দিয়ে সংসার চলে?

কুয়াকাটার হোসেনপাড়া এলাকার জেলে আ. রহিম বলেন, সরকার ২২ দিনের যে অবরোধটা দেয় তা আমরা মানি এবং উপকারও পাচ্ছি। তবে ৬৫ দিনের অবরোধে জেলেরা ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে অন্যদিকে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিচ্ছে। আমাদের দাবি এই সকল বিষয়ে সরকার যেন নজর দেয়।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী বলেন, নিবন্ধিত জেলের মধ্যে খাদ্যসহায়তা হিসেবে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।

কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দীন মোল্লা বলেন, সরকারের দেয়া সকল আইন জেলেরা মেনে আসছে। তবে আমাদের দাবি, যদি সরকার এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে চায় তাহলে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সংশোধন এবং জেলেদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে তা-না হলে দিনদিন এই পেশা বিলীন হতে থাকবে।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন উপজেলায় কর্মহীন ইলিশ শিকারি নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩০৫ জন জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। এ ছাড়া জেলেদের জন্য বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। তবে জেলেদের সব দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পেশ করা হবে তারা বিষয়গুলোকে বিবেচনা করবেন।

নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন বলেন, সমুদ্র সম্পদ রক্ষা ও বৃদ্ধিতে সরকার যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে নৌ-পুলিশ, কোস্ট-গার্ড, নৌবাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিকভাবে তৎপর থাকবে। জেলেদেরকে আমরা পর্যাপ্ত সচেতন করেছি। ওই সময়ের মধ্যে কেউ মাছ শিকারে গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য অধিদফতর।  এ সময় ইলিশ শিকার ও পরিবহন সম্পূর্ণ অবৈধ। ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চালু করা হয়।  ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়