Apan Desh | আপন দেশ

তৃণমূল বিএনপি: শমসের চেয়ারম্যান, তৈমূর মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২৩:০৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তৃণমূল বিএনপি: শমসের চেয়ারম্যান, তৈমূর মহাসচিব

ফাইল ছবি

ঢাকা: তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা সমশের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার। সমশের মবিন চৌধুরী তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান আর তৈমূর দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদাকে দলটির নির্বাহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দলের প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিলে দলটির ২৭ সদস্যের আংশিক কমিটি নির্বাচন করা হয়। সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। আর তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে শমসের মবিন চৌধুরী তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ৩০০ সংসদ সদস্য এই ১৭ কোটি মানুষের নেতৃত্ব দিতে পারবেন? আমি মনে করি, না। আমি মনে করি আমাদের সংসদ সদস্য অনেক বেশি নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে হবে। এই ধরনের সুপারিশ তৃণমূলের ইশতেহারে থাকবে।

সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যত পদক্ষেপ নেবে তাতে তৃণমূল বিএনপির সহযোগিতা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন শমসের মবিন। তিনি বলেন, আমরা লগি-বৈঠার হত্যা দেখতে চাই না। বাস-ট্রাক পোড়ানোর সহিংসতাও দেখতে চাই না। সাবেক এই বিএনপির নেতা বলেন, আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেটি সম্ভব যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ ও পেশাদার ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশন যদি তার ক্ষমতার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। শুধু তাই নয়, আমার ভোট যদি সঠিকভাবে গণনা হয়, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।

অনুষ্ঠানে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক দল করেছি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজনীতি করেছি। আজ আমি তার মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়ার পর দেড় বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। এই দেড় বছর আমি বিএনপির পতাকা বহন করেছি। আমি মনে করি, আগে যে দল করতাম সেটির সঙ্গে আদর্শগত ও জাতীয়বাদের মিল রয়েছে তৃণমূল বিএনপির। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। এই জন্য এই দলে এসেছি। দলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবার সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করছি। এই দল প্রাইভেট কোম্পানির হবে না। এখানে সবার মূল্যায়ন করা হবে।

এডিসি হারুন অর রশিদ যদি বিরোধী দলের কাউকে পেটাতো তাহলে তার প্রমোশন হতো বলে দাবি করেন তৈমুর আলম। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে পেটানোর কারণে আজ তার শাস্তি হয়েছে। যেমন বিএনপির সংসদ সদস্য জয়নুল আবেদিনকে পেটানোর কারণে আরেক হারুনের প্রমোশন হয়েছে। প্রতিটি সংসদ সদস্য তার নিজ এলাকায় নিজস্ব বাহিনী গঠন করেছে। সেখানে বাস, ট্রাকসহ যে কোনো কিছু পরিচালনা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। আজ যদি দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানো যেত তাহলে দেশে এতো হানাহানি থাকতো না। কোথাও গণতন্ত্র নেই। পুলিশ বলে, ডিসি বলে সরকারি দলকে ভোট দিতে হবে।

কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্যে অন্তরা হুদা বলেন, আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন আমার বাবার প্রিয়ভাজন, আমার পিতৃতুল্য প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী এবং অপরজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তৈমূর আলম খন্দকার। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানাই। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও অভিভাবকত্বে আমার বিশ্বাস আমাদের দল আরো শক্তিশালী ও গতিশীল হবে ইনশাআল্লাহ।

বক্তব্যে তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতি বিস্তারের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা তার বাবা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দিয়েছেন উল্লেখ করে অন্তরা হুদা বলেন, এই দিনে এই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের জন্য কত আন্দোলন। অথচ আন্দোলনকারী এই দলই সে সময় ক্ষমতায় ছিল। আমরা আর এই পুরোনো বিতর্কে না যাই। তবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যখনই উঠে আসে, তখনই দুঃখ প্রকাশ করে নিজেদের সান্ত্বনা দিই।

কাউন্সিল ও কর্মী সমাবেশের দ্বিতীয় পর্বে আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন কাউন্সিলের সঞ্চালক ও দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান। ২৭ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করা হয়। ভাইস চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন- কে এ জাহাঙ্গীর মজমাদার, মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, মোখলেসুর রহমান ফরহাদী, দীপক কুমার পালিত, মেনোয়াল সরকার ও ছালাম মাহমুদ। যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন- অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, ফয়েজ চৌধুরী, তালুকদার জহিরুল হক, রোখসানা আমিন সুরমা। কোষাধ্যক্ষ (ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদা) নির্বাচিত হয়েছেন শামীম আহসান। সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন- শাহজাহান সিরাজ (বরিশাল), আকবর খান (চট্টগ্রাম)। এ ছাড়া সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে কামাল মোড়লকে।

দফতর সম্পাদক হিসেবে একে সাইদুর রহমান ও মো. রাজু মিয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজী ইব্রাহীম খলিল সবুজ, যুববিষয়ক সম্পাদক হিসেবে শাহাবউদ্দিন ইকবাল, আইনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট আশানুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক স্থপতি নাজমুস সাকিব, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সাগর ঘোষ এবং স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ফরহাদ হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্তরা হুদার সভাপত্বিতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী, তৈমূর আলম খন্দকার, বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, প্রগতিশীল ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়াল, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস, প্রগতিশীল ন্যাপের আহ্বায়ক পরশ ভাসানীসহ আরও অনেকে।

তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। এরপর তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। কমিশন তখন তাদের নিবন্ধন দেয়নি। পরে দলটি আদালতের দ্বারস্থ হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। দলের প্রতীক দেয়া হয় সোনালি আঁশ। নিবন্ধন পাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় নাজমুল হুদা মারা যান। পরে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা। মঙ্গলবার দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলো।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়