Apan Desh | আপন দেশ

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুমির হত্যা!,তদন্তসহ বিচার দাবি

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুমির হত্যা!,তদন্তসহ বিচার দাবি

ছবি: আপন দেশ

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান আলী (রহ.) মাজার সংলগ্ন দিঘিতে থাকা মিঠা পানির দুইটি কুমির মধ্যে একটির মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া কুমিরটি পুরুষ ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রশাসনের নির্দেশে দিঘি থেকে মৃত কুমিরটিকে ওপরে ওঠানো হয়।  

এদিন দুপুরে দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পুরুষ কুমিরটিকে মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, উপজেলা প্রশাসন, মাজার কর্তৃপক্ষ, খাদেমসহ দর্শনার্থীরা মাজার প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। এদিকে, কুমিরটির মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. লুৎফর রহমান।

এর আগে, ২০২১ সালের ১২ জুন কুমিরটি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তখন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির ও স্থানীয় খাদেমদের সহায়তায় কুমিরটিকে ওপরে তোলা হয়েছিল। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে কুমিরটিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। তারপর থেকে মোটামুটি সুস্থ ছিল পুরুষ কুমিরটি। স্থানীয় ফকিরদের দাবি কুমিরের একটি চোখ অন্ধ ছিল।

এদিকে, কুমিরের মৃত্যু নিয়ে খাদেম, ফকির ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। চেতনা নাশক ও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দীর্ঘদিন এক পাড়ে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।

ফকির দারা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, এখানে কুমিরকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে বশ করা হয়। শেষ পাঁচ-ছয় মাস ধরে এই কুমির দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় সংলগ্ন এফ এম মোস্তফা ফকিরের বাড়ির পুকুরে ছিল। দীর্ঘদিন কুমির এক জায়গায় থাকে না। ওষুধ দিয়ে তারা ব্যবসার জন্য কুমির আটকে রেখেছিল।  

মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, কুমিরগুলো দিঘির প্রাণ ছিল। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি এই কুমিরকে টাকা কামানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। কুমিরকে আটকে রেখে দর্শনার্থী ও ভক্তদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। ছয়-সাত মাস ধরে কুমিরটিকে একজনের বাড়ির পুকুরে আটকে রাখা হয়েছিল। এতদিন ধরে কুমির এক জায়গায় থাকে না। আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগও করেছি। এই কুমির মেরে ফেলা হয়েছে। কুমিরের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন এই খাদেম।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটি তিন বছর আগেও একবার অসুস্থ হয়েছিল। তখন আমরা চিকিৎসা দিয়েছিলাম। এরপরে মোটামুটি ভালো ছিল। আমরা কুমিরের মরা দেহের ময়নাতদন্ত করব। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করব।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। মাদরাজ থেকে আনা দুটি কুমিরের পুরুষ কুমিরটি মারা গেছে। এখানে খাদেমদের অভিযোগ রয়েছে, আমরা তদন্ত করছি। এছাড়া কুমিরের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুলতানি শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ‘খলিফতাবাদ’ নগর বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি এই অঞ্চলে ৩৬০ দিঘি খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দিঘি’। যে দিঘীর পাড়ে তার সমাধি রয়েছে। এই দিঘিতে তিনি মিঠাপানির প্রজাতির দুইটি কুমির ছেড়ে ছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহান (রহ) -এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুইটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন।

দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশধরেরা এখানে বাস করছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় মারা যাওয়ার কারণে কালাপাহাড় ও ধলা পাহাড়ের বংশধরেরা শঙ্কায় পড়ে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে দিঘির কুমির ‘কালা পাহাড়’ এবং ২০১৫ সালে ‘ধলা পাহাড়’ কুমিরটি মারা যায়। ধলা পাহাড় নামে কুমিরটির চামড়া বাগেরহাট যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

এরই মাঝে মাজারে কুমিরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে ছয়টি কুমির এনে মাজারের দিঘিতে ছাড়া হয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে দুইটি কুমির মারা যায়। পরে কুমির দুইটি সুন্দরবনের করমজলে পাঠানো হয়। অবশিষ্ট দুইটি কুমির এতদিন এই মাজারে ছিল। এদের মধ্যে নারী কুমিরটি কয়েকবার ডিম দিলেও কোনো বাচ্চা হয়নি। পুরুষ কুমিরটি অস্বাভাবিক মৃত্যুতে নারী কুমিরটি সঙ্গী হারা হয়ে পড়ল।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়