Apan Desh | আপন দেশ

ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধে কর্মহীন ৬ হাজার শ্রমিক 

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১৮ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ০২:৩৩, ২৩ আগস্ট ২০২৩

ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধে কর্মহীন ৬ হাজার শ্রমিক 

ফাইল ছবি

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে বন্দরে কাজ করা প্রায় ৬ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরাও। গত ২৩ জুন থেকে পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে।  

জানা যায়, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার একমাত্র স্থল বন্দর ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দর। এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বুল্ডার পাথর আমদানি হয়ে থাকে। এই বন্দরের আমদানিকৃত পাথর দিয়েই দেশের সিকিভাগ পাথরের চাহিদা পুরন হয়। দৈনিক প্রায় শতাধিক গাড়ি এই বন্দর থেকে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। মালামাল লোড-আনলোডিং ও ক্রাশ করতে প্রায় ছয় হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করে বন্দরে। পাথর আমদানী বন্ধ থাকায় বন্দরের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে করে বেশি বিপাকে পড়েছেন দৈনিক হাজিরায় কাজ করা শ্রমিকরা। আয় রোজগার না থাকায় তাদের সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। শ্রমিক না থাকায় বন্দরে হোটেল ও দোকান পাট গুলোও বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের পাশপাশি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের এলসি করা প্রায় ১০ কোটি টাকা আটকে আছে ভারতীয় ব্যাবসায়ীদের কাছে। ফলে বসে বসে ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে ব্যাবসায়ীদের। এই অবস্থা দীর্ঘমেয়াদী হলে ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। পথে বসবে বন্দরে কাজ করা ৬ হাজার শ্রমিক পরিবার। 

জানা যায়, এই বন্দরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৬ হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক এসে কাজ করে। ৬ হাজার শ্রমিক পরিবারের আয়ের একমাত্র পথ এই স্থল বন্দর। প্রতিদিন ভোর হতেই শ্রমিকরা ছুটে আসে বন্দরে। দিন হাজিরা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বন্দরে কাজ করেন তারা। প্রায় ২ মাস যাবত পাথর রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্দরে কোন পাথর আসছে না। পাথর না আসায় কাজও নেই শ্রমিকদের। তাদের সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। 

বন্দরে কাজ করা শ্রমিক নুর নাহার, শেফালী বেগম, কমল বেগম বলেন, ৩শ টাকা দিন হাজিরায় বন্দরে কাজ করেন তারা। সেই টাকায় সংসার চলে। কিন্তু ভারত থেকে পাথর না আসায় কাজ কর্ম নেই। তাই পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। কাজও নেই বাজারঘাটও নেই। 

নারী শ্রমিক জাহানারা বেগম ও ফুলভানু বেওয়া বলেন, এই বন্দরে কাজ করেই তাদের সংসার চলে। সংসারের প্রয়োজনে দুজনেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। বন্দরে কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতেন নিয়মিত। পাথর না আসায় কাজ বন্ধ। তাই অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই সংসার চলছে তাদের। সেই সঙ্গে ঋণের কিস্তিও দিতে পারছেন না। এতে অনেক চাপে আছেন বলে জানান তারা। 

আরও পড়ুন: জাতীয় শোক দিবসে সাঈদীর নামে দোয়া, শিক্ষককে শোকজ

বন্দরে কাজ করা শ্রমিক ইব্রাহিম, আসকর মিয়া, ইদ্রিস আলী জানান, গত প্রায় দুই মাস যাবত পাথর আসছে না। এতে বন্দরের সকল কাজকর্ম বন্ধ। দিন হাজিরায় কাজ করেই সংসার চালাই আমরা। কাজ না থাকায় বেকার বসে আছি। ধারধেনা করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছি। আর কিছুদিন এভাবে চললে স্ত্রী সন্তান পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। না হয় জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যেতে হবে। 

ট্রাকচালক জহুরুল হক বলেন, মুলত স্থল বন্দর থেকে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজটাই বেশি করে থাকি। কিন্ত পাথর না আসায় আমাদের ব্যবসাও এখন দারুণ মন্দা। ভাড়া পাচ্ছি না, বেকার বসে আছি। কবে নাগাদ আবার বন্দরে পাথর আসবে তাও জানি না।
  
ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দর আমদানী-রফতানি কারক সমিতির সভাপতি কৃষিবিদ আবদুল্লাহ আল মোকাদ্দেছ রিপন জানান, বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে পাথর রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতীয় ব্যাবসায়ীরা। গত ২৩ জুন থেকেই পাথর আসছে না। পাথর না আসায় শ্রমিকরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

ধানুয়া কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থলবন্দরের ব্যাবসায়ী মশিউর রহমান লাকপতি বলেন, শ্রমিকদের কোলাহলে মুখরিত থাকতো বন্দর। পাথর আসা বন্ধ হওয়ায় বন্দরে কাজ করা শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি শ্রমিকই দিন হাজিরায় কাজ করে,আর সেই টাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ডাল ভাত খেয়ে জীবন কাটায় শ্রমিকরা। কাজ না থাকায় অভাব অনটনের মধ্যদিয়েই দিন কাটছে তাদের। পরিষদ থেকে যতটুকু পারছি সহায়তা করছি। এই সমস্যা সমাধানে বন্দরে ইমিগ্রেশন চালুর দাবি জানান তিনি।  

এ ব্যাপারে ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা একে এম রফিকুল জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন অতিবৃষ্টির ফলে ভারতের বেশ কিছু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই পাথর বুঝাই ট্রাক চলাচল করতে পারছেনা। এ কারনে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ভারতীয় ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই পাথর আসা শুরু হবে বলে জানান তিনি।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ