Apan Desh | আপন দেশ

বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার বাদি কিশোরীর এশা হত্যা না আত্মহত্যা ?

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার বাদি কিশোরীর এশা হত্যা না আত্মহত্যা ?

বড় মনি ও এশা: ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা সেই কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকালে শহরের বোয়ালী এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

নিহত এশা মির্জা বোয়ালী এলাকার লতিফ মির্জার মেয়ে। লতিফ মৃত্যুর আগে বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য ছিলেন। ধর্ষণের পর অতঃপর প্রসবকৃত সন্তানের পিতার পরিচয় পেতে দীর্ঘদিন লড়াইকরছে এশা। এ অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি সে আত্মহত্যা করেছে-এমন প্রশ্ন ঘুরছে টাঙ্গাইলে। 

এশা মির্জার বোন লুনা মির্জা জানান, শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাত ১২টার দিকে তাদের দুজনের কথা হয় মোবাইলে ফোনে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এশার ননদ আমার স্বামীকে ফোন করে জানায় ও ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। পরে দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় পরিবার।

আরও পড়ুন<<>>কুমারীর পেটে বড় হচ্ছে ভ্রুন, পাল্টাপাল্টি মিছিল, আসছে শাহজাহার খানের নাম!

বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে সদস্যরা এসে এশার মরদেহ উদ্ধার করে। টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু ছালাম মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে এশা মির্জার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাই। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।  

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঢাকার ক্রাইমসিনকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা আসলে মরদেহটি উদ্ধার করা হবে।

বড় মনি জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের ভাই। বড় মনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

পেছনের ঘটনা

গত ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলায় ধর্ষণের কারণে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মামলায় বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।

তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণ পায় মেডিকেল বোর্ড। পরে গত ৬ এপ্রিল দুপুরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন ওই কিশোরী।

গত ২১ আগস্ট ধর্ষণ মামলায় বড় মনিরের হাইকোর্টের দেয়া জামিন গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৫ মে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনি। পরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল মহসীন জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আরও পড়ুন<<>> টাঙ্গাইলের সেই কিশোরী মা-নবজাতকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এদিকে ৩০ জুন এক বেসরকারি ক্লিনিকে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এশা। গত ১১ জুলাই বিচারপতি শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বড় মনিরকে জামিন দেন। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর চেম্বার আদালত তার জামিন স্থগিত করে দেন। ২১ আগস্ট ধর্ষণ মামলায় বড় মনিরের হাইকোর্টের দেয়া জামিন ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন আদালত। শিশুটির জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) পিতা বড় মনির নন; ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ তথ্য আসে। ৯ অক্টোবর তাকে জামিন দেন আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আপিল বেঞ্চ।

মামলার এজাহারে বলা হয়- ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হয়। এ নিয়ে বড় মনির সঙ্গে কিশোরীর হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। সমস্যা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন মনি। ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালতপাড়ায় মনি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে গেলে ওই কিশোরীকে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন মনি। রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে মনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে কারও কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করতে তিনি নিষেধ করেন। প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হতো। এতে কিশোরীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা বড় মনিকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দেয়া হয়। সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে মনি তাকে আদালতপাড়ার বাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাজি না হওয়ায় বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে তাকে আবারও ধর্ষণ করেন মনি। একপর্যায়ে তার স্ত্রী কিশোরীকে মারধর করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। তাকে নানা হুমকিও দেয়া হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়