Apan Desh | আপন দেশ

কুমারীর পেটে বড় হচ্ছে ভ্রুন, পাল্টাপাল্টি মিছিল, আসছে শাহজাহার খানের নাম!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ১৪ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ০০:২৩, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

কুমারীর পেটে বড় হচ্ছে ভ্রুন, পাল্টাপাল্টি মিছিল, আসছে শাহজাহার খানের নাম!

প্রতীকী ছবি ও ইনসেটে বড় মনির

বিয়ের আগেই কিশোরী হচ্ছেন অন্তঃসত্বা। আর মায়ের পেটে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ভ্রুনটি। আর ক’মাস পরেই শিশুরূপে আসবে ধরায়। পেটে ধারণ করছেন বলে শিশুর মাকে চিহ্নিত করা গেছে, কিন্তু অনাগত শিশুর জন্মদাতা কে? এ প্রশ্নের জবাব দিতেই আইনী লড়াইয়ে নেমেছেন মা। তিনি ( মা) যাকে জন্মদাতা বলে দাবি করছেন সেই জন্মদাতা জানাচ্ছেন অস্বীকৃতি। এমন অবস্থায় চলছে ডিএনএ-চেষ্ট। এরপরও কী মিলবে নবাগতের পিতার নাম কি? 

এদিকে অন্তঃসত্বা কিশোরীর পক্ষের দাঁড়িয়েছেন নারী ও সচেতন সমাজ। তারা ওই শিশুর ‘জন্মতাদা’ পিতার গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে বিপক্ষেও দাড়িয়ে গেছে আরেকটি গ্রুপ। শেষ দেখতে রাজপথে নেমেছেন উভয় পক্ষ।

ঘটনাটি টাঙ্গাইল জেলার। ঘটনার নয়ক গোলাম কিবরিয়া বড় মনির। তিনি টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্রিজের সহ-সভাপতি। ঢ়টনার শুরু ১৭ ডিসেমম্বর থেকে আর থানায় গড়িয়েছে, মামলা হয়েছে গত ৫ এপ্রিল। কুমারী অন্তঃসত্বার ঘটনায় এরই মধ্যে আন্দোলনে উত্তাল টাঙ্গাইল। মামলার পর আত্মগোপনে বড় মনির। আর বাদিনীও মান বাঁচাতে রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।বড় মনির জেলার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও কোনো সংগঠন তার দায় নিচ্ছে না। জেলা আওয়ামী লীগ বিব্রত বোধ করছে। পরিবহণ নেতারা বলছে ওটা তার বক্তিগত। একেবারে শুখই খুলছেন না ব্যবসায়িদের সংগঠনটি।

ওই কিশোরীর এজাহারে বলা হয়, ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় নিজ বাড়ির পাশে একটি ভবনে বড় মনি কিশোরীকে ডেকে নেন। এরপর তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও আপত্তিকর ছবি তুলে রাখেন। আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে পরে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ২৯ মার্চ রাতে আদালত পাড়ার একটি বাড়িতে তুলে নিয়ে তাকে আবারও ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার পর বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাব তাকে মারধর করেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, আমি তো আসামি না। আসামি না হয়েও আমাকে আসামির মতন লুকিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। যারা আসামি তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি চাই ন্যায়বিচার। বড় মনির ক্ষমতাসীন দলের নেতা। সে শাহজাহান খান এমপির জামাইয়ের বড় ভাই (পুতরা) বলে এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে।  

৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল সচেতন নারী সমাজের ব্যানারে টাঙ্গাইলে বড় মনিকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। শহরের ভাসানী হল থেকে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এতে পাঁচ শতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন। ৮ এপ্রিল ভূঞাপুর উপজেলা সদরে দুই শতাধিক নারী ঝাড়ুমিছিল করেন।

ব্যানারে বিক্ষুব্ধরা লিখেছে, ‘টাঙ্গাইলে ১৭ বছরের পিতামাতা মরা এতিম নাবালিকা মেয়েকে (ধর্ষিতার নাম ) জোরপূর্বক ধর্ষণ করে অন্তঃসত্বাকারী ও নির্যাতনকারী শাহজাহান খান এমপির মেয়ের জামাই টাঙ্ড়াইল-২ (ভূয়াপুর-গোপালপুর ) আসনের ছোট মনি এমপির বড় ভাই লম্পট গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরকে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি এবং ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ।’ 

এদিকে মামলার পর টাঙ্গাইল শহর এবং ভূঞাপুর গোপালপুরে সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির বিরোধী পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ৯ এপ্রিল বেলা ১১টায় সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে টাঙ্গাইলে বড় মনির বিরুদ্ধে মামলা প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে পৌরসভার কাউন্সিলর আমিনুর রহমান ও কামরুল হাসান বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, এটি তো আমার মালিক সমিতির কর্মকাণ্ড না, এটি তার ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনের গল্প। পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, অপরাধের দায় দায়িত্ব তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে পড়বে। আমাদের পরিবহনের কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ কোনো বিপদে পড়লে পরিবহন সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সেভ করার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। আমরা বিভিন্ন জায়গায় যেতাম, মানববন্ধন করতাম, সংবাদ সম্মেলন করতাম।

ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মাসুদুল হক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি অবগত আছেন। ওনারা যেভাবে বলবেন, আমরা সেভাবে কাজ করব। বড় মনি যে জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছেন, সে ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারছি না, সইতেও পারছি না।

গত ৯ এপ্রিল সকালে ‘সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে বড় মনির পক্ষে মিছিল বের করা হয়। এতে তার অনুসারীরা অংশ নেয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পথসভা করা হয়।

এ বিষয়ে ধর্ষণ মামলার আসামি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বলেন, একটি মহল পরিকল্পিত ও রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এসব কাজ করছে। আমি শুধু ওপেনে আসতে পারছি না বিধায় নানান লোকে নানান কথা বলছে।

টাঙ্গাইল সদর থানার আফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া বলেন, বাদিনীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। লিখিত মামলার তদন্তভার ইনস্পেকটর (তদন্ত) হাবিবুর রহমানকে দেয়া হয়। পরে এই মামলায় ভিকটিমের মেডিক্যালের পরীক্ষার বিষয় আছে, বিজ্ঞ আদালতের বিষয় আছে। সে ক্ষেত্রে আমরা পরের দিন মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠাই। মেডিক্যাল টেস্ট শেষে আমরা ভিকটিমকে আদালতে প্রেরণ করি। সেখানে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান, আসামি গ্রেফতার বিষয়ে আমাদের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, মামলার তদন্তের পাশাপাশি ও আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়