Apan Desh | আপন দেশ

ধর্ষকের জরিমানা এক হাজার টাকা!

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ধর্ষকের জরিমানা এক হাজার টাকা!

ছবি : আপন দেশ

৩১ জানুয়ারি দুপুর। চাকলা আশ্রয়ণ কেন্দ্রের এক নারী জোরপূর্বক ধর্ষিত হন। অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম (৩০) ওই প্রকল্পের ৬ নং ঘরের বাসিন্দা। ইউনিয়ন পর্যায়ে সালিশ হয়। অভিযুক্তকে মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করেন চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বিচার অমান্য করেন। সেইসঙ্গে থানায় মামলা করতে চাইলে তাকে হুমকি দেন ইউপি চেয়ারম্যান। হুমকি উপেক্ষা করেই পাবনার বেড়া থানায় মামলা করেছেন তিনি। আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল। চাকলা ইউনিয়ন পরিষদে সালিশি বৈঠক বসে। বিচারকাজ পরিচালনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস সরদার। উপস্থিত বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যও। বিচারে শফিকুল ইসলাম অপরাধী সাব্যস্ত হন। সালিশি বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে জুতা পেটা, নাকে খৎ ও কান ধরে উঠাবসার শাস্তি দেয়া হয়। একইসঙ্গে মাত্রা এক হাজার টাকার জরিমানা করে মিমাংসা করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।

কিন্তু সালিশি রায় মানতে অস্বীকৃতি জানান ভুক্তভোগীর স্বামী। থানায় মামলা করবেন বলে জানান। তাকে হুমকি দিয়ে মামলা করতে নিষেধ করেন চেয়ারম্যান ইদ্রিস সরদার।

ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, আমার স্ত্রীর ইজ্জতের দাম এক হাজার টাকা নির্ধারণ করে রায় দেন চেয়ারম্যান। রায় দেবার সাথে সাথে আমি জানিয়েছি, এ রায় মানি না। আমি থানায় মামলা করব। তখন চেয়ারম্যান ধমক দিয়ে বলেন, ‘এতবড় সাহস তোর, আমার রায় মানিস না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে রটিয়ে দিব বউ দিয়ে দেহ ব্যবসা করিয়ে খাস।’ 

আরও পড়ুন>> জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড

তিনি জানান, এছাড়াও গালিগালাজ, নানা হুমকি দেন চেয়ারম্যান। আমার স্ত্রীকে জোর করে ধর্ষণ করেছে শফিকুল। তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো অপরাধীর পক্ষ নিয়ে আমাকেই হুমকি দেন। আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে। তবুও থানায় মামলা করেছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ইদ্রিস সরদার অত্যন্ত অর্থলোলুপ এবং অনৈতিক চরিত্রের। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় যেকোনো ঝামেলার মিমাংসায় তার শরণাপন্ন হন স্থানীয়রা। কিন্তু তিনি উভয়পক্ষকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে সালিশ করেন। সালিশে স্বজনপ্রীতি, টাকা খেয়ে অন্যায়ের পক্ষে রায় দেন। টাকা যার বিচার তার, এই নীতিতেই চলেন বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা মুরাদ হোসেন বলেন, ধর্ষণ অপরাধের মিমাংসা এক হাজার টাকা জরিমানায়। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিমাংসাও হতে পারে না। এছাড়া এটি ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের জন্য খুবই দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আহসান হাবিব বলেন, ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মিমাংসা করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া সালিশি রায়ে অভিযুক্তকে কায়া শাস্তি (শারিরীক শাস্তি) দেবার এখতিয়ারও কারও নেই। এদিক থেকে এ সালিশি কার্যক্রম সঠিক হয়নি।

আরও পড়ুন>> ভোটের রাতে ধর্ষণ, ১০ জনের ফাঁসি

অভিযোগ নাকচ করেছেন চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার। বলেন, উভয়পক্ষের সম্মতিতে সালিশ করা হয়েছে। সালিশি কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেছেন তারা। এর বাইরে একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারাই এই বিষয়টিকে ভিন্নভাবে তুলে ধরছেন।

এ ব্যাপারে বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যদের পুলিশকে অবহিত করার দায়িত্ব রয়েছে। সেটি না করে অন্যায়ভাবে কেউ যদি কোনো সালিশ বা মীমাংসার চেষ্টা করে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই তদন্ত চলছে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আপন দেশ/এনআর/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়