Apan Desh | আপন দেশ

অধ্যক্ষের ভুলে ফি দিয়েও পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়নি ছাত্রীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ১৬ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৪:৫৬, ১৬ আগস্ট ২০২৩

অধ্যক্ষের ভুলে ফি দিয়েও পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়নি ছাত্রীর

ছবি : আপন দেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ভুলের জন্য প্রয়োজনীয় ফি দিয়েও এক ছাত্রীর আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও প্রবেশপত্র হাতে পায়নি এই শিক্ষার্থী।

রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে প্রতিকার চেয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষার কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

চলতি বছর অনুষ্ঠেয় (এইচএসসি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রীর নাম জান্নাত আক্তার। পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের চা বিক্রেতা মোশারফ হোসেনের মেয়ে। উপজেলার আওয়ালিয়ানগর মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসার আলিম শাখার ছাত্রী। এই বছর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষায় তার অংশ নেয়ার কথা। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটির গাফিলতি ও অনিহার কারণে তার পরীক্ষা দেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: এইচএসসি পেছানোর দাবি নেই, ৫০ নম্বরের পরীক্ষা চাই

ইউএনও কাছে দেয়া ওই অভিযাগের অনুলিপি মাদ্রাসাবোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি), জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুলাই এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য আওয়ালিয়ানগর মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ আবদুল হক আজাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম পূরণের জন্য ৩ হাজার টাকা দেয় এই ছাত্রী। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হক ওই ছাত্রী ও তার বাবার সামনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম পূরণের টাকা নিজের টেবিলের ড্রয়ারে রাখেন। সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত হয়। ওই মাদ্রাসা থেকে এএইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার নিয়মিত ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু ফরম পূরণের টাকা দিলেও তাদের মধ্যে জান্নাত ছাড়া ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড সম্পন্ন হয়। অধ্যক্ষ মুঠোফোনে জান্নাতের বাবাকে বিষয়টি জানান। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার খবর পেয়ে গত ৮ আগস্ট বাবাকে নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে জান্নাত। টাকা না দেয়ায় ফরম হয়নি বলে অধ্যক্ষ তাদের জানান। ফরম পূরণের  টাকাসহ কাগজপত্র অধ্যক্ষের কাছে দিয়েছেন এবং তিনি (অধ্যক্ষ) সেই টাকা ড্রয়ারে রেখেছেন বলে জানায় জান্নাত। অধ্যক্ষ তখন তাদের সামনেই টেবিলের ড্রয়ার খুলে টাকাসহ কাগজপত্র দেখতে পান। অধ্যক্ষ তখন নিজের ভুল স্বীকার করে পরের দিন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে ফরম পূরণ করে দিবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু রোববার দুপুর পর্যন্তও তার ফরম পূরণ হয়নি। এইচএসসি (আলমি) পরীক্ষা ১০দিন পিছিয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষকে ফরম পূরণ করে দিতে অনুরোধ করেন এই ছাত্রী। কিন্তু অধ্যক্ষ কিছুইতে আর ফরম পূরণ সম্ভব না এবং সময় শেষ বলে জান্নাতকে জানান।

মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল হাই বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রেখে ভুলে গেছেন বলে আমার কাছে স্বীকার করেছেন। মেয়েটা কি পরীক্ষা দিতে পারবেনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছে এই বছর জান্নাত পরীক্ষা দিতে পারবেনা।
  
জান্নাত আক্তার বলেন, মাদ্রাসার হুজুর (অধ্যক্ষ) ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি অবগত করেও কোনো লাভ হয়নি। আমার বাবা ও আমি অনেক আকুতি-মিনতি করেছি। কিন্তু তাদের মন গলেনি। তাই সহায়তা চেয়ে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত দিয়েছি। 

জান্নাতের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, আমি চা বিক্রি করে মেয়েটাকে পড়িয়েছি। অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এখন বলছেন তিনি ফরম পূরণ করতে দিতে পারবে না। 

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হক আজাদ বলেন, ভুল তো মানুষের হতেই পারে। ফরম পূরণের জন্য চেষ্টা করতেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জলিল বলেন, অধ্যক্ষকে বোর্ডে পাঠানো হবে যেন মেয়েটা পরিক্ষা দিতে পারে। আশা করছি এই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।

আরও পড়ুন: একটু দোয়া করতে চেয়েছিলেন, বাড়িতেই ঢুকতে দেয়নি: শিক্ষামন্ত্রী

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ফরম পূরণসহ প্রবেশপত্রের জন্য মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন সময় শেষ কিন্তু জেলা প্রশাসক মহোদয় ও আমার আগ্রহ শুনে বোর্ড চেয়ারম্যান রাজি হয়েছেন। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন বুধবার অধ্যক্ষ নিজে যেন বোর্ডে যান। শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে বলে ইউএনও জানান। মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেন তিনি অবহেলা করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, আমি আইসিটি ও শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকেও গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য বলা হয়েছে। মেয়েটা যেন পরীক্ষা দিতে পারে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়