Apan Desh | আপন দেশ

মামলা জয়ে এগিয়ে ভুক্তভোগী

কোভিড ভ্যাকসিনে মস্তিষ্কে ক্ষতির অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৫ মে ২০২৪

কোভিড ভ্যাকসিনে মস্তিষ্কে ক্ষতির অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অভিযোগ উঠেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যুক্তরাজ্যের জেমি স্কট। তার দাবি, ২০২১ সালের এপ্রিলে ভ্যাকসিনটি নেন তিনি। এরপর রক্ত জমাট বাঁধায় তার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তিনি আর কাজ করতে পারছেন না। তাই যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা আইনে মামলা করেছেন।

এ মামলায় তিনি এক ধাপ এগিয়েছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। আদালতের কাছে জমা দেয় নথিতে প্রথমবারের মতো অ্যাস্ট্রাজেনেকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দায় স্বীকার করেছে। বলছে, ভ্যাকসিনটি খুবই বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিযোগকারী স্বজন হারানোর কথা বলছেন। আবার কেউ অভিযোগ করছেন গুরুতর অসুস্থতার।

মামলায় ভ্যাকসিনটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিনটি প্রত্যাশিত পরিমাণে নিরাপদ ছিল না। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এ দাবিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে আসছিল। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেশটির হাইকোর্টে জমা দেয়া এক আইনি নথিতে তাদের কোভিড ভ্যাকসিনের ফলে ‘খুব বিরল ক্ষেত্রে, টিটিএস ঘটাতে পারে’ বলে স্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

মামলার আইনজীবীরা বলছেন, টিটিএস মানে থ্রম্বোসিস উইথ থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম। টিকা দেয়ার পর এটি ঘটলে একে ভিআইটিটি (ভ্যাকসিন-ইনডিউসড ইমিউন থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া) হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

টিটিএস/ভিআইটিটি একটি বিরল সিন্ড্রোম, যেখানে একইসঙ্গে থ্রম্বোসিস (রক্ত জমাট বাঁধা) ও থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (প্লেটলেট সংখ্যা কমে যাওয়া) হয়। টিটিএস/ভিআইটিটি’র ফলে মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও স্ট্রোক, মস্তিষ্কের ক্ষতি, হার্ট অ্যাটাক, রক্ত জমাট বেঁধে ফুসফুসের ধমনীতে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি অঙ্গচ্ছেদও হতে পারে বলে জানান আইনজীবীরা।

টিকা না দিলেও থ্রম্বোসিস হতে পারে। তবে আমেরিকান সোসাইটি অব হেমাটলজির মতে, বিরল সিন্ড্রোম টিটিএস/ভিআইটিটি কেবল টিকা দেয়ার পর হওয়া থ্রম্বোসিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

জেমি স্কটের আইনজীবীরা ২০২৩ সালের মে মাসে পাঠানো একটি চিঠির উত্তরে বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের বলেছিল: ‘আমরা মানছি না যে, সাধারণত (বড় আকারে) ভ্যাকসিনের কারণে টিটিএস হয়’। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে জমা দেয়া আইনি নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ‘এটি স্বীকার করেছে যে, খুব বিরল ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন টিটিএসের কারণ হতে পারে। এর সাধারণ প্রক্রিয়া (কীভাবে এটি ঘটে) জানা যায়নি’।

প্রতিষ্ঠানটি চাইছে, অন্য কোনো কারণে নয় বরং টিকার কারণেই যে টিটিএস হয়েছে- প্রত্যেক অভিযোগকারী এ দাবি প্রমাণ করুক। এতে বলা হয়েছে: ‘এছাড়াও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের (বা অন্য যেকোনো ভ্যাকসিন) অনুপস্থিতিতেও টিটিএস ঘটতে পারে। যেকোনো স্বতন্ত্র ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর কারণ জানতে বিশেষজ্ঞ-প্রমাণ লাগবে।

স্কটসহ মোট ৫১ জন অভিযোগকারীর মামলার প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী বলেছেন যে, এটি এ মামলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার অবস্থানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। 

আইনি সংস্থা লেই ডে-এর সারাহ মুর বিবিসিকে বলেন: ‘এটি সাধারণ কারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি- অর্থাৎ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন বিশেষ ক্ষেত্রে টিটিএস এবং ভিআইটিটি ঘটাতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ যে তারা এখন আনুষ্ঠানিক আবেদনে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

এর ফলে বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার পথ প্রশস্ত হতে পারে। কারণ অভিযোগকারীরা চায় তারা যেন ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়, সঙ্গে কিছু আর্থিক নিরাপত্তাও। 

বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রোজেনেকা বলেছে, ‘অভিযুক্তকারীদের যে কারও প্রতিই আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। রোগীর নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভ্যাকসিনসহ সমস্ত ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে স্পষ্ট ও কঠোর মানদণ্ড রয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আর বাস্তব-বিশ্বের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন ধারাবাহিকভাবে একটি গ্রহণযোগ্য সুরক্ষা বিধান দেখিয়েছে। সারা বিশ্বের নিয়ন্ত্রকরা ক্রমাগত এটাই বলেছে যে, টিকার সুবিধা এতটাই বেশি যে এটি অত্যন্ত বিরল সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যায়।’

সূত্র: বিবিসি

আপন দেশ/এসএমএ

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়