Apan Desh | আপন দেশ

সাত জেলার সড়কে শুক্রবার ২৫ প্রাণহানি

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৮ জুলাই ২০২৩

সাত জেলার সড়কে শুক্রবার ২৫ প্রাণহানি

ফাইল ছবি

দেশের আট জেলায় ছুটির দিন শুক্রবার (৭ জুলাই) সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে যশোরে সাতজন, টাঙ্গাইলে পাঁচজন, সিলেটে পাঁচজন, গাইবান্ধায় চারজন, বগুড়ায় দুইজন এবং রাজবাড়ী, খুলনা, সাতক্ষীরা ও হবিগঞ্জে একজন নিহত হন।

আপন দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

যশোর : সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলায় বাসচাপায় ইজিবাইকের ছয় যাত্রীসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন আছেন। যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ইজিবাইক চালক যশোর সদরের সুলতানপুরের সাইফুলের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭), বাঘারপাড়ার যাদবপুরের হেলালের যমজ ছেলে হোসেন ও হোসাইন (২), তার মেয়ে খাদিজা (৭) ও একই গ্রামের বাবুল মুন্সির স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৩০)। বাকি দুজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

জাহাঙ্গীর হোসেন নামের স্থানীয় এক দোকানি বলেন, যশোর থেকে একটি ইজিবাইক সাতজন যাত্রী নিয়ে লেবুতলা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। তেঁতুলতলা এলাকায় পৌঁছালে ইজিবাইকটি ডানে একটি বাইপাস সড়কে নামতে যায়। এসময় ইজিবাইকের পেছনে থাকা একটি বাস চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।

টাঙ্গাইল : জেলায় পৃথক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।

বিকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের রাবনায় এলাকায় কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে তিনজন এবং বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এক নারী ও বাসাইলে এক শিশু নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জেলার গোপালপুর উপজেলার হযরত আলীর ছেলে শাহ আলম (৪০), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গোয়াকড়া গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে শাহান শাহ (২৫) এবং নুরজাহান (৪৫)। তারা সবাই পিকআপ ভ্যানের যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া বাসাইলে মোটরসাইকেলে নিহত শিশু ফারজানা (৩) ফুলকী ইউনিয়নের নেদার পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাদলের মেয়ে।

সিলেট : সিলেটের জৈন্তাপুরে যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন।

রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে এ দুর্ঘনা ঘটে।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

নিহতরা হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীখেল গ্রামের মোজাম্মেল আলীর ছেলে নূর উদ্দিন (৫৫), বারগাতি গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে আব্দুল লতিফ (৫০), ফরফরা গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে মো. কামাল (২৫), বড়খলা গ্রামের মৃত খুর্শেদ আলমের ছেলে মুসদ আলী (৫০) ও দিঘীপাড় গ্রামের মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে আব্দুল মতিন ওরফে কাচাই (৪৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে যাত্রীবাহী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো জ ১৪-১৬৯৫) সিলেট থেকে জাফলংয়ের দিকে যাচ্ছিল। এসময় বিপরীতমুখী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। অটোরিকশায় সাত জন যাত্রী ছিলেন। সবাই হতাহত হয়েছেন। এসময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশে পড়ে যায়। এ ঘটনায় প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

গাইবান্ধা : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কোমরপুর এলাকায় ও দিনগত রাত ১২টার দিকে বালুয়া বাজার এলাকায় দুর্ঘটনা দুটি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস রংপুর যাচ্ছিল। অপরদিকে যাত্রীবাহী একটি ট্রাক ঢাকা যাচ্ছিল। পথে বালুয়া বাজার এলাকায় বাস ও ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন।

খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালান। তারা আহতদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।

অপরদিকে সকালে যাত্রীবাহী একটি পিকআপ রংপুরের দিকে যাচ্ছিল। কোমরপুর এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস পিকআপটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপে থাকা বেলাল হোসেন (২০) মহাসড়কের ওপর ছিটকে পরেন। এ সময় বাসটির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

ঘাতক বাসটি পালিয়ে গেলেও বিক্ষুব্ধ জনতা একই কোম্পানির বাস মনে করে রংপুরমুখী হানিফ পরিবহনের একটি বাস আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

বগুড়া : আম পরিবহনের সময় বগুড়ার দুই উপজেলায় পৃথক দুর্ঘটনায় চালকসহ দুইজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে একটি গাড়ি দিনাজপুর আন্যটি নওগাঁ থেকে আম নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। ভোরে বগুড়া সদরে ও শেরপুর উপজেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের একজন হলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার সৈয়দ আলীর ছেলে ২৩ বছরের মাহমুদুল হাসান। তিনি ঢাকার একটি আমের আড়তে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। অন্যজন পিকআপ চালক নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের ২০ বছরের পিন্টু পাহান।

রাজবাড়ী : সদর উপজেলার উড়াকান্দায় বালুবাহী ডাম্পট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংর্ঘষে বিজয় মোল্লা (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বিজয় মোল্লা রাজবাড়ী পৌরসভার নিউ কোলনী এলাকার রহমান মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, মোটরসাইকেল আরোহী রাজবাড়ী থেকে উড়াকান্দার দিকে যাচ্ছিল। পথে বালুবাহী ডাম্পট্রাকের সঙ্গে সংর্ঘষ হয়। এতে ট্রাকটি উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী বিজয়ের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুজন মোটরসাইকেল আরোহী। ঘটনার পর কৌশলে পালিয়েছেন ট্রাকচালক। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করে।

খুলনা : বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর লবণচরা থানাধীন বিশ্বরোড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধূর (৩০) মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তার স্বামী। তবে হতাহতের পরিচয় তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি পুলিশ।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে লবণচরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে জিরোপয়েন্টের দিকে যাচ্ছিল ওই দম্পতি। পেছন থেকে বিআরটিসির একটি বাস মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেল থেকে চালকের স্ত্রী রাস্তায় পড়ে গেলে বাসটির চাকা তার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এসআই আরও বলেন, ওই নারীর স্বামী গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তার অবস্থাও গুরুতর। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা : কলারোয়া উপজেলায় নানাবাড়ি বেড়াতে এসে মামাতো ভাইয়ের নতুন মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে আফজাল হোসেন (১৯) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন তার মামাতো ভাই বাবু। রাত ৯টার দিকে উপজেলার গোয়ালচাতর চৌরাস্তা মোড়ে এ দুর্ঘটনা হয়। 

নিহত আফজাল একই উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের কলাটুপি গ্রামের মাহমুদুল হকের ছেলে। তিনি এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

হবিগঞ্জ : চুনারুঘাট উপজেলায় বালুবোঝাই ট্রাক্টর উল্টে আল-আমিন (২৫) নামে এক মাটিকাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। দুপুরে উপজেলার কচুয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা হয়। নিহত আল-আমিন ওই গ্রামের জহুর হোসেনের ছেলে।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল হক বলেন, নিহত আল-আমিন ট্রাক্টরে বালু নামানো-ওঠানো শ্রমিকের কাজ করতেন। কচুয়া গ্রাম থেকে ট্রাক্টরে বালু বহন করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাক্টরটি উল্টে যায়। এ সময় ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে তিনি আহত হন।

ওসি আরও বলেন, তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়