Apan Desh | আপন দেশ

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন অক্টোবরে 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:১২, ২৩ জুলাই ২০২৩

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন অক্টোবরে 

ছবি : আপন দেশ

হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অক্টোবরে এই টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উদ্বোধনের জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। করা হয়েছে ১০০ সদস্যের উদ্বোধনী কমিটি এবং ১৯টি উপকমিটি।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরে টার্মিনালটি উদ্বোধনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। উদ্বোধনের সময় টার্মিনালটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আপাতত আংশিক উদ্বোধন হবে। ২০২৪ সালে যাত্রীরা এখান থেকে সেবা পাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শত শত শ্রমিক-কর্মচারী দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা এখানে কাজ করছেন। উদ্বোধনের পরে বাকি থাকবে শুধু যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমপক্ষে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ অতিথি আপ্যায়নের লক্ষ্য নিয়েই চলছে আনুষঙ্গিক কাজ। এ দিন অন্তত দুটি বোর্ডিং ব্রিজ চালুর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। টার্মিনালের সর্ব দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্তের এ দুটির একটিতে বোর্ডিং ব্রিজে সংযুক্ত থাকবে বিমানের সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর প্লেন। এখানেই যাত্রীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের ফ্লাইটে নেয়ার পর নতুন ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে ফ্লাইট রানওয়ের দিকে যাবে। এভাবেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ছক সাজানো হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ছাড়াও নির্মাণ সংস্থা এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের বিপুলসংখ্যক অতিথি অংশ নেবেন। তাদের বিশাল এই কর্মযজ্ঞের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা তুলে ধরবেন তারা।

জানা গেছে, থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের সময় যতই এগিয়ে আসছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর আগ্রহ ততই বাড়ছে। এরই মধ্যে নতুন করে আরও ১৫টি এয়ারলাইনস আগ্রহ দেখিয়েছে। গরুডা এয়ারলাইনস, কোরিয়ান এয়ারলাইনস, ইরান এয়ারলাইনস, ইরাকি এয়ারলাইনস, ইউজ এয়ারলাইনস, নয় বছর আগে স্থগিত হওয়া পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনস ও ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর এয়ার এশিয়া, এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই, ইতিহাদ ও এয়ার এরাবিয়া তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তারা তৃতীয় গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন জানিয়েছে।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, শাহজালাল (র.) বিমানবন্দর দিয়ে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩৬টি এয়ারলাইন্স ২০টি দেশের ২৭টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে শিগগির নতুন নতুন দেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশের সংখ্যা ৫৪টিতে পৌঁছেছে।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় টার্মিনালকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ব্রুনাই ও মরিশাসের সঙ্গে বিমান চলাচল চুক্তি হয়েছে। কয়েক দিন আগে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। অচিরেই চুক্তি হচ্ছে ইথিওপিয়ার সঙ্গে। এ ছাড়া সাইপ্রাস, লেবাননসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে দেশের এভিয়েশন খাতে বিপ্লব হবে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা বাড়বে বাংলাদেশের। আর্থিক দিক দিয়েও লাভজনক হবে। নতুন নতুন গন্তব্যে যাবে দেশের এয়ারলাইনসগুলো। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো আরও বেশি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। আকাশপথে যত বেশি যোগাযোগ বাড়বে বাংলাদেশ ততই লাভবান হবে।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, প্রকৃত অর্থে প্রকল্পের শেষ মেয়াদ হচ্ছে ২০২৪ সালের এপ্রিল। সে হিসেবে আমরা তার প্রায় সাত মাস আগেই এটি উদ্বোধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা নিশ্চিত আগামী এপ্রিলের আগে অবশ্যই এ প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের টার্গেট প্রাথমিক উদ্বোধনের আগেই সর্বোচ্চ পরিমাণের কাজ শেষ করে নেয়া। থার্ড টার্মিনাল দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই সচেষ্ট রয়েছেন- যাতে দেশবাসী সত্যিকার অর্থেই তাদের স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল দেখতে পান। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই স্মার্ট এভিয়েশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। থার্ড টার্মিনাল, কক্সবাজার ও সিলেট বিমানবন্দরের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ এখন সমাপ্তির পথে। এগুলোর মধ্যে সবার আগে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে থার্ড টার্মিনাল।

দেশের বিমানবন্দরের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত তৃতীয় প্রকল্প, যা থার্ড টার্মিনাল হিসেবেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এ দুটি টার্মিনাল এক লাখ বর্গমিটার জায়গার ওপর। আর থার্ড টার্মিনালে রয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা। বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত এই বিমাবন্দরের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এ প্রকল্পে। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়