Apan Desh | আপন দেশ

বেস্ট হোল্ডিংসের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি! শেয়ার বাজারে আসছে

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ১৭ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ০১:৪৯, ১৮ আগস্ট ২০২৩

বেস্ট হোল্ডিংসের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি! শেয়ার বাজারে আসছে

ফাইল ছবি

অন্যের সম্পত্তি নিজের দাবি করে শেয়ার বাজার থেকে সাড়ে ৩শকোটি টাকা লোপাটের আয়োজন করছেবেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডনামক একটি প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত অর্থ বিনিয়োগ করা হবে গাজীপুর মাওনায় নির্মীয়মাণ পাঁচ তারকা হোটেলে।

আর লক্ষ্য হাসিলে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আনা হয়েছে। ইস্যু ম্যানেজার, স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের কতিপয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়ে ওঠা শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে এর নেপথ্য কুশীলব হিসেবে

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বলছে, আইপিও অনুমোদনের জন্য দাখিলকৃত ডকুমেন্টের সত্যতা যাচাইয়ের সক্ষমতা কিংবা সুযোগ নেই। আর এই অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটি ইতোপূর্বে ভুয়া ত্রুটিপূর্ণ অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে একাধিক আইপিও অনুমোদন দেয়। একই অজুহাতে চেষ্টা চালায়বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড আইপিও অনুমোদনের। প্রতিবেদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উদঘাটিত হয়েছে এমন তথ্য

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘বেস্ট হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের সম্পত্তিকেনিজেরদাবি করছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) যে প্রসপেক্টাস প্রচার করা হয়েছে তাতে ৫৯টিনিজস্ব সম্পত্তি বিবরণ রয়েছে। সম্পত্তিগুলোর মূল্য দেখানো হয়েছে অবিশ্বাস্য অঙ্কের। এর মধ্যে এমন সম্পত্তিও আছে যেগুলোর মালিকানাইবেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডকিংবা এর কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠানেরই নয়। শেয়ার বাজারের ইতিহাসের যা এক নজিরবিহীন প্রতারণা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল’-এর (এফআরসি) চেয়ারম্যান হামিদ উল্লাহ ভুঁইঞার মতে, ফলস, ফেব্রিকেটেড ডকুমেন্টের ভিত্তিতে আইপিও ইস্যু হচ্ছে কি-না তা যাচাই করার দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের। কিন্তু সংস্থাটির সেটি করছে না

ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইপিও প্রস্তাবের দায়-দায়িত্ব ইস্যু ম্যানেজারের। আইনের কথা হচ্ছে, যেকোনো আইপিও অনুমোদনের আগে অডিট রিপোর্টটির ওপর এফআরসি একটা মতামত নেয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মতামতের জন্য কোনো অডিট রিপোর্ট আমাদের কাছে পাঠানো হয় না। রিপোর্টগুলোও ভেরিফাই করা হয় না। সত্যি বলতে, কেউ পাওয়ার ডেলিগেট করতে চায় না। তাছাড়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজশ থাকে

আরও পড়ুন<<>> শেয়ারবাজারে আসছে বেস্ট হোল্ডিংস

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের শর্ত অনুসারে ইতোমধ্যেই রোড শো সম্পন্ন করেছে বেস্ট হোল্ডিংস। গত আগস্ট এখন চেষ্টা চলছে আইপিও অনুমোদনের। একটি বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা পাঁকাপাঁকি করেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই শুরু হবে আইপিও বিডিং। তবে আইপিও যে প্রসপেক্টাস অনুমোদন করা হয়েছে তাতে ধরা পড়েছে ভয়াবহ জালিয়াতি। একটিটেবিল মেডপ্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেস্টহোল্ডিংস আকৃষ্ট করতে চাইছে বিনিয়োগকারীদের। যে প্রতিবেদনের অনেকাংশেরই কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রাজধানীর জোয়ারসাহারা-নিকুঞ্জ এলাকায় রয়েছেবেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডলা-মেরিডিয়াননামক একটি হোটেল। ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায়ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালপ্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছেভালুকা রিসোর্ট বেস্ট হোল্ডিং নোয়াখালী প্রকল্পের আওতায় রয়েছে একটি পোল্ট্রি ফার্ম

আইপিও প্রসপেক্টাসে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড মোট ৫৯টি সম্পত্তিনিজস্ববলে দাবি করা হয়েছে। এসব সম্পত্তির পরিমাণ, দলিল (ডিড), মিউটেশনের তারিখ এবং মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে অন্তত: অর্ধডজন সম্পত্তি যাচাই করেন এই প্রতিবেদক। তাতে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, সেটি রীতিমতো চমকে ওঠার মতো

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন আহমেদ ভুঁইয়া। বিভিন্ন অঙ্কের শেয়ারধারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন, আফ্রা বেগম ওরফে আফ্রা আঞ্জুম, উম্মে কুলসুম, মোহাম্মদুল মোশাও, মোহাম্মদ ওবায়দুল হক, সাদমান হাসান খান, রিপা আক্তার, গুলশান আরা মিয়া, কাজী শাহ আলম, নিয়াজ আবরার খান, ফারাবী এনএ রহমান, ফুয়াদ এনএ রহমান, লায়লা রহমান, সৈয়দ ইকবাল হোসেন, মোহাম্মদ আরফাদুর রহমান, মো: শফিকুররহমান, এসএম খুরশিদ-উল-আলম, মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মো: শামসুল আলম, সুজানা সামরিন, ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজির, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজির, তাসরিন মুজিব, আফরোজা খান

রোড শো-তে বক্তব্য রাখছেন বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আহমেদ ও স্বতন্ত্র পরিচালক  লে. জে. (অব.) শেখ মামুন খালেদ

এসব শেয়ার হোল্ডার অধিকাংশই তার পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়-স্বজন। কিন্তু যে সম্পত্তির তথ্য প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর অনেকগুলোতেই তাদের কোনো প্রকার মালিকানা নেই। নিছক অন্য ব্যক্তিবর্গের নামে সম্পাদিত দলিলের কিছু নম্বর (ডিড নম্বর) এখানে ব্যবহার করা হয়েছে

যেমন: প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত দলিল নং-৫০২৪। উত্তরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদিত সাফকবলা দলিলে স্থানীয় মাপে সম্পত্তি রয়েছে মাত্র কাঠা ছটাক নাল জমি। মূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা। সম্পত্তির মালিক জন। তারা হলেন, টাঙ্গাইল, গোপালপুর থানাধীন ডাকুরী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে মো: রাশেদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী হোসনে আরা সীমা। জমিটি বিক্রি করেছেন ঢাকার উত্তরখান, চানপাড়া গ্রামের মৃত মনিরউদ্দিনর কাজীর ছেলে মো: আফছারউদ্দিন কাজী ওরফে আফছার উদ্দিন বেপারি। ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালিন সাব-রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার সম্পত্তিটির নিবন্ধন দেন। প্রসপেক্টাসে এই সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৬২ কোটি ৮৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৬ টাকা। সম্পত্তির অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে, প্লট নং-৭৯/,নিকুঞ্জ (উত্তর) বাণিজ্যিক এলাকা, জোয়ারসাহারা মৌজা, খিলক্ষেত, ঢাকা। জমির আয়তন দেখানো হয় ৮২ দশমিক ৬৫ ডেসিমেল। এখানেলা মেরিডিয়ান’ (কমার্শিয়াল ) অবস্থিত বলে উল্লেখ রয়েছে

দলিল নম্বর-৭২৩৬। উত্তরা সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে এটি রেজিস্ট্রি হয় ২০০৮ সালের জুলাই। এটি সাধারণ একটি চুক্তিনামা রদ রহিত বা বাতিলকরণ দলিল মাত্র। দলিল গ্রহীতা জন। মো: আবুল হাসেম, পিতা- মো: আব্দুল মজিদ খান এবং মাহবুব আরা বেগম, স্বামী - মো: আবুল হাসেম। ঠিকানা- অঞ্জলি, -ইস্কাটন গার্ডেন রোড, ঢাকা। স্থায়ী ঠিকানা-গ্রাম বেতমোর, পো: বেতমোর, থানা-বেতাগী, বরগুনা

দলিলটি দিয়েছেন, খন্দকার .এফ.এম. সফিউল্লাহ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, খন্দকার প্রোপার্টিজ লিমিটেড। দলিলের জমির পরিমাণ শ্রেণি উল্লেখ নেই। সম্পত্তির মূল্যও নির্ধারণ করা নেই। তবে প্রসপেক্টাসে এটির রেজিস্ট্রেশন ফিসহ খরচ দেখানো হয়েছে লাখ ১৫ হাজার টাকা

প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত দলিল নং-৭২৩২ এটিও নিবন্ধিত হয় ২০০৮ সালের জুলাই উত্তরা সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে। উত্তরা থানাধীন বাউনিয়া মৌজায় অবস্থিত এই জমির স্থানীয় মাপে পরিমাণ মাত্র আড়াই কাঠা। মূল্য লাখ ২৯ হাজার টাকা। দলিল অনুসারে সম্পত্তির মালিক মোসা: নুরুন নাহার শিউলী। স্বামী- মো: রেহানুল হাসান। পিতা- মো: নূরুল ইসলাম, মাতা- মোসা: জহেরা খাতুন। পেশা-প্রবাসী। স্থায়ী ঠিকানা-উত্তরখান, ঢাকা। আগে সম্পত্তিটির মালিক ছিলেন জন। তারা হলেন- মৃত আব্দুল মৈজদ্দিনের পুত্র মোজাম্মেল হক তোজাম্মেল হক। উভয়ের স্থায়ী ঠিকানা- বহিসার টেক, পো: ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, পল্লবী, ঢাকা। সম্পত্তির তফসিল-জেএল, সিএস-২১১, এসএ-৩৬, আরএস ১৩ নং ঢাকা সিটি জরিপে ৩৬৩৮ নং, মিউটেশন- ১০৯১ নং, ৬৫৬৮ নং খতিয়ানে লিখিত খারিজা ১০৫/২৪ নং জোতভুক্ত। এটির মূল্য দেখানো হয়েছে কোটি লাখ ৮৫ হাজার টাকা

উত্তরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদিত দলিল নং-৪৯৭১। দলিলটি নিবন্ধিত হয় ২০০৮ সালের ১১ মে। নাল শ্রেণীর এই জমির পরিমাণ দশমিক ২৪ কাঠা। মূল্য- লাখ টাকা। ক্রয়সূত্রের সম্পত্তির মালিক- মোসা: রিমা আলম। স্বামী- মো: ফারুকুল আলম। এর আগে সম্পত্তিটির মালিক ছিলেন জন। জামিরুন নেছা তার মেয়ে কহিনূর আক্তার।বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড প্রসপেক্টাসে এই সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে কোটি লাখ ৭০ হাজার টাকা

২০০৮ সালের ১১ মে উত্তরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত হয় ৪৯৭২ নম্বর দলিলটি। উত্তরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাফকবলা দলিলটি নিবন্ধিত হয় ২০০৮ সালের ১১ মে। নাল শ্রেণীর জমিটির আয়তন স্থানীয় পরিমাপে ২দশমিক ২৪ কাঠা। দলিল অনুসারে এটির মালিক উত্তরখান দোবাদিয়া গ্রামের মো: শরিফউদ্দিনের পুত্র মো: আরিফউদ্দিন। আগে সম্পত্তিটির মালিক ছিলেন জামিরুন নেসা তার মেয়ে কোহিনূর আক্তার। সম্পত্তির মূল্য লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রসপেক্টাসে দেখানো হয় লাখ ৭০ হাজার টাকা

৬১০৫ নম্বর দলিলটি মূলত: একটি হস্তান্তরিত ফ্ল্যাট। উত্তরা আবাসিক এলাকার সেক্টর-১২, শাহ মখদুম এভিনিউ। প্লট নং-৩৭। তলা ভবনের ৩য় তলার দক্ষিণ পার্শ্ব। আযতন- ১৪৯৬ দশমিক ০৮ বর্গ ফুট বা ১৩৮ দশমিক ৯৮৬ বর্গ মিটার। নিচ তলায় অচিহ্নিত অবিভাজ্য ৩৬০ বর্গ ফুট মূল ভূমি। এটি কেনা হয় ১১ লাখ ২১ হাজার ৮শটাকায়। সাফকবলা এই দলিলের মাধ্যমে প্রকৌশলী মো: হাবিব আহসানের পক্ষে নিযুক্ত আমমোক্তার কেএফএম রাজিউল্লাহ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক- এসেন্স প্রপার্টি লি: ফ্ল্যাটটি বিক্রি করেন। এটি কেনেন /বি, টিকাটুলি, ঢাকার বাসিন্দা সিয়ামউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী গৃহবধূ নাজমুন নাহার। আইপিও প্রসপেক্টাসে এই সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে কোটি লাখ ১০ হাজার টাকা

লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, সম্পত্তিগুলোর বর্তমান মালিকানার সঙ্গেবেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড মালিকানাসত্ত্বের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত ডিড নম্বরগুলো নিছক কিছু রেজিস্টার্ড দলিলের নম্বর ছাড়া কিছুই নয়। অর্থাৎ সম্পত্তির ভুয়া দলিল দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ৩শ৫০ কোটি টাকা লোপাটের উদ্দেশ্যে দলিল নম্বরগুলো প্রসপেক্টাসে ব্যবহার করা হয়েছে। উল্লেখিত দলিলের সম্পত্তির মালিক বেস্ট হোল্ডিংস কিংবা এর কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠানও নয়

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেলা-মেরিডিয়ান ঢাকা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। আইপিও শর্ত অনুসারে ইতিমধ্যেই কোম্পানিটি রাজধানীর একটি হোটেলে রোড-শো সম্পন্ন করে। বিধি অনুসারে, এতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের সামনে কোম্পানির পরিচিতি, বিগত কয়েক বছরের আর্থিক তথ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি তুলে ধরে

আইপিও থেকে প্রাপ্ত টাকার ৩০ শতাংশ উচ্চ-সুদের ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করবে কোম্পানিটি। বাকি ৭০ ভাগ টাকা ব্যয় করবে আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠানম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালপরিচালিত ভালুকা রিসোর্ট প্রকল্পে

বেস্টহোল্ডিংয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ অর্থবছরে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের আয় ছিল ২শ৪০ কোটি টাকা। আয়ের ৬১ দশমিক ৩৩ শতাংশ দেখানো হয়েছে হোটেললা মেরিডিয়ানথেকে। বেস্ট হোল্ডিংসের নোয়াখালী প্রকল্প থেকে আয় দেখানো হয় ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ভালুকা প্রকল্প থেকে আয় দেখানো হয় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ১০ শতাংশ এল এম কমার্শিয়াল এবং অবশিষ্ট দশমিক ৫৮ শতাংশ আয় দেখানো হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য থেকে। একই বছর প্রতিষ্ঠানটির নীট মুনাফা ছিল প্রায় ১০১ কোটি টাকা। শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল টাকা ০৯ পয়সা। এর আগের বছর নীট মুনাফা হয় ৩৯ কোটি টাকা এবং ইপিএস ৪২ পয়সা

গতবছর ৩০ জুন কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৫৭ টাকা ২২ পয়সা। ২০২১ সালের ৩০ জুন সেটি ছিলো তা ৫৪ টাকা ৩৮ পয়সা ২০০৯ সালে ব্যবসা শুরু করে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি। আইপিও প্রসপেক্টাসে পেইডআপ ক্যাপিটাল দেখানো হয়েছে ৯শ২৫ কোটি টাকা

এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে বেস্ট হোল্ডিংস বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে তালিকাভুক্তির আবেদন করেছিল। বেস্ট হোল্ডিংসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানবেস্ট হোটেলস লিমিটেড গাজীপুরের মাওনায় একটি ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ করছে। যা চলতি বছর চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আইপিওতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেআইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টশান্তা ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড

সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া অডিট ফার্ম (আর্টিসান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস) দিয়ে নিরীক্ষা অ্যাসেট পুন:মূল্যায়ণ করা হয়। অডিটে হোটেল লা- মেরিডিয়ানের দাম দেখানো হয় হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে শুধু ১০ তলা একটি ভবনের দাম দেখানো হয়েছে হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। যাতে একেকটি কক্ষের খরচ পড়ে ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিদেশী মুদ্রায় যা ১৪ লাখ ৫৪ হাজার মার্কিন ডলার। এক বছরে লা-মেরিডিয়ানের পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে ১শগুণের বশি দেখানো হয়েছে

এর আগে ধরণের ভুয়া আর্থিক রিপোর্টের কারণে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের আইপিও আবেদন বাতিল করে বিএসইসি। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যায়নেইকোম্পানটিকে নন-কমপ্লায়েন্সবলা হয়

সম্পত্তির ভুয়া দলিল ব্যবহার করে কিভাবে আইপিও অনুমোদনের আবেদন জানতেশান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রধান নির্বাহী রুবাইয়াত ফেরদৌসকে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তার মতামত জানাও সম্ভব হয়নি।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়