Apan Desh | আপন দেশ

উষ্ণতম এপ্রিল শেষে মে’তে মিলবে স্বস্তি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১০:৪২, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

উষ্ণতম এপ্রিল শেষে মে’তে মিলবে স্বস্তি!

ছবি : সংগৃহীত

বৈশাখের টানা দাবদাহে পুড়ছে দেশ। প্রতিদিনই বাড়ছে অসহনীয় তাপমাত্রা। একইসঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে বৃষ্টির প্রতীক্ষা। এপ্রিল যেন মরুভূমির উষ্ণতা নিয়ে হাজির হয়েছে। সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।

তীব্র গরম অতীতের সব ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এপ্রিল ৭৬ বছরের মধ্যে উষ্ণতম। হাঁসফাঁস প্রাণ-প্রকৃতির কাছে মাসটি যেন ফুরোতেই চায় না। স্বাধীনতার পর এবারই একটানা সবচেয়ে লম্বা তাপপ্রবাহ দেখছে দেশের মানুষ। ৩০ দিন ধরে চলা এ তাপপ্রবাহ ইতোমধ্যে ভেঙেছে রেকর্ড। 

আবহাওয়া অফিস বলছে, তাদের কাছে ১৯৪৮ সাল থেকে আবহাওয়ার যে তথ্য রয়েছে, সে হিসাবে এবারই সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের উপর দিয়ে। গত ৩১ মার্চ শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। ২০২৩ সালে টানা ২৪ দিন ছিল তাপপ্রবাহ।

এর মাঝে সুখবর মে মাসে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মে মাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এপ্রিলের মতো মে মাসে তাপপ্রবাহের সময়সীমা এতটা দীর্ঘ হবে না, তবে কিছু আর্দ্রতা থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ মে থেকে দেশে কিছু বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হবে। পরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। মে মাসে দুই থেকে তিনটি মৃদু তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে।’ 

মে মাসকে উষ্ণতম মাসগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘এল নিনো’র নিরপেক্ষ অবস্থার কারণে আসন্ন মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গরম হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পরিস্থিতি এল নিনো শুরু হওয়ার প্রায় সাত মাস পরে এখন নিরপেক্ষ অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। অন্তত জুলাই পর্যন্ত এটি নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। লা নিনা (শীতল পর্যায়) সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন <> ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ

এল নিনো ২০২৩ সালের জুন মাসে শুরু হয়েছিল। যার ফলে সারাদেশে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং দীর্ঘ তাপপ্রবাহ শুরু হয়। 

‘এল নিনো’ আর ‘লা নিনা’ দুটি স্প্যানিশ শব্দ। এল নিনো অর্থ বালক বা ছোট ছেলে, আর লা নিনা অর্থ বালিকা বা ছোট মেয়ে। নাম দুটি সামুদ্রিক বায়ু সঞ্চালনের ফলাফলের দুই অবস্থা বোঝায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রমাগত পরিবর্তন থেকেই সৃষ্টি হয় এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রশান্ত মহাসাগরের পানির তাপমাত্রার চক্রাকার পরিবর্তনের ফলে এ বৈশ্বিক জলবায়ুগত ঘটনাটি হয়ে থাকে। এর কারণে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত উভয়ই প্রভাবিত হয়।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু চক্র তিন প্রক্রিয়ায় আবর্তিত হয়। প্রক্রিয়াটি এনসো চক্র নামে পরিচিত। এনসো চক্রের তিনটি পর্যায় রয়েছে: এল নিনো, লা নিনা আর এনসো নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ পর্যায়। আবহাওয়ার শুষ্ক মৌসুম হলো এল নিনো পর্যায়, যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কমে যায় আর বন্যাও কম হয়। এ সময় তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। আর লা নিনার সময় বৃষ্টিপাত ও বন্যা বেশি হয়। তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। 

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘চলমান তাপপ্রবাহ ৩ মে’র পর বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কমতে শুরু করবে। ৩ মে থেকে ১৩ মে এর মধ্যে, প্রচণ্ড বজ্রঝড়, তীব্র বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টি সারাদেশে বয়ে যাবে, প্রায় প্রতি রাতে সিলেট বিভাগে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে।’

আমেরিকান গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল অনুযায়ী, ১৪ মে থেকে ১৭ মে এর মধ্যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানায়। এটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এবং ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের মধ্যে ২০-২৪ মে এর মধ্যে স্থলভাগে আঘাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। 

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জুন থেকে সেপ্টেম্বর, বর্ষা মৌসুমের শেষার্ধ পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। এটি বলছে, এল নিনোর নিরপেক্ষ অবস্থা রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ লা নিনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাংলাদেশের কিছু জেলায় তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে। এরপর তাপপ্রবাহ প্রায় সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও রংপুর বিভাগের অধিবাসীরা রীতিমতো লু হাওয়ার অনুভূতিতে হাঁসফাঁস করছেন। বহু অঞ্চলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে দূষণ আর গরমে বিপর্যস্ত। প্রতিদিন প্রাণঘাতি গরমে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই খুলছে এই বন্ধ হচ্ছে। সবচেয়ে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে গরম স্থবির করে দিয়েছে পুরো দেশকে।

আপন দেশ/এমআর/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়