Apan Desh | আপন দেশ

টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি কৃষকের, ব্যস্ত সময় বীজতলা তৈরিতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ১২ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৫:৫২, ১২ আগস্ট ২০২৩

টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি কৃষকের, ব্যস্ত সময় বীজতলা তৈরিতে

ছবি : আপন দেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ক্ষেতের পানিতে লাঙ্গল-জোয়াল আর প্রযুক্তির লাঙ্গলের শব্দ, দূর থেকে ভেসে আসা কৃষকদের নানা হাঁকডাকে এখন মুখরিত নাসিরনগরের দিগন্ত জোড়া মাঠ। সবাই কর্মব্যস্ত। এ যেন ঈদের আনন্দ। এ দৃশ্য হাওরবেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলার চাষের মাঠের।

কৃষকরা বলছেন, ভরা বর্ষায়ও দেখা মেলেনি বৃষ্টির। বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন আমন ও পাট চাষিরা। কারণ আমন চাষ বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল আর পাট জাগও নির্ভর করে বর্ষার পানির উপর। তারা ধরেই নিয়েছিলেন এ বছর ফসলে ব্যপক ক্ষতির শিকার হবেন। কিন্তু, এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে তাদের। খালবিলে দেখা মিলছে পানির, আর চাষিদের ব্যস্ত সময় কাটছে জমি ও আমনের বীজতলা তৈরিতে।

কৃষকরা বলছেন, প্রতিনিয়ত সারসহ কৃষি উপকণের দাম বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করেছিলেন তারা। তবে কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছেন তাদের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদর, বুড়িশ্বর, পূর্বভাগ, হরিপুর, চাপড়তলা, ধরমন্ডল, গোকর্ণ, কুন্ডা ও গুনিয়াউক ইউনিয়নের জমিগুলো খালি পড়ে আছে। আমন চাষের ভরা মৌসুমেও সেচ সংকটের কারণে অনেকেই এখনো ধান রোপন করতে পারেনি। সম্প্রতি এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টির ফলে খালবিল পানিতে ভরে উঠেছে। জমিতে চলছে হাল চাষ, সেচ দেয়া, বীজতলা তৈরির ধুম।

নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছর প্রায় সাত হাজার হেক্টর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে বীজতলা আড়াইশ হেক্টর। মাসের পর মাস খরার করাণে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। 

উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া গ্রামের কৃষক সুনিল সরকার বলেন, মনে মনে ভাবছিলাম এই বছর আর ক্ষেত করতাম না। মাসের পর মাস বৃষ্টি নাই। কিন্তু হঠাৎ কইরাই কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওনে জমিত আইলাম। আইজকা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার করতাছি। কাল আইসা বীজতলা ছিটাই যামু।

আরও পড়ুন: সুবর্ণচরের বিএডিসিতে হরিণ শাবক প্রসব

ধরমন্ডল ইউনিয়নের কৃষক ইকবাল মিয়া বলেন, দশ দিন আগেও জমি চাষ করুম এই চিন্তা ছিলনা, কিন্তু টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে খালে পানি আইছে। জমিতেও মেলা পানি জমছে। এখন ধানের চারা আইন্যা লাগামু। আর কিছুদিন এই ভাবে বৃষ্টি হইলে এই বার ধান ভালই ফলন অইব। 

কৃষক মোহন লাল বলেন, সেচ খরচ, সারের দাম ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে এক বিঘা আমন ধান ঘরে তুলতে খরচ পড়বে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৃষ্টি নেই। অল্প কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বীজতলা রোপন করতেছি ঠিকই। কিন্তু নতুন করে বৃষ্টি না হলে প্রতি বিঘাতে ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হবে।
কারণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, গত বছরের চেয়ে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে সেচের খরচও বেশি; সার আর কামলা (শ্রমিকের) দাম আরো চড়া।

গুনিয়াউক ইউনিয়নের কৃষক বলেন, বৃষ্টির অভাবে এই বছর তিন কানি (তিন বিঘা) জমি কম লাগাইছি। বৃষ্টি নাই। ডিজেলও মেলা দাম। তাই মেশিন দিয়া হিচ্চা (সেচ) দিয়া ক্ষেত কইরা পুষাইত না। খালি ডিজেল না, দাম বাড়ছে সারের। 

কৃষাণী সুবলা রানী দাস বলেন, আমার জামাই নাই। আমি নিজেই ২০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করছি। কয়েকদিন পর ক্ষেতে চারা লাগামো।

আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, বেশ কিছুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং বর্ষার পানি না আসায় আমনের বীজতলা তৈরি নিয়ে কৃষকের মধ্যে এক ধরণের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টির কারণে কৃষক এখন তাদের জমিতে বীজতলা তৈরি করতে পারছে। এই বীজতলা যেন আদর্শ বীজতলা হয় সে জন্য আমাদের কৃষি অফিস থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কৃষদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। বৃষ্টির কারণে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছি।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়